শিলাজিৎ খাওয়ার নিয়ম-শিলাজিতের ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানুন।
শিলাজিৎ খাওয়ার সঠিক নিয়ম এবং শিলাজিতের গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পারবেন। নিয়মিত শিলাজিৎ সেবনের মাধ্যমে আপনার শারীরিক এবং মানসিক সুস্থ্যতা বজায় রাখতে ব্যাপক সাহায্য করে থাকে। তবে শিলাজিৎ খাওয়ার বয়স এবং শারীরিক অবস্থার প্রেক্ষিতে ডোজ এবং খাওয়ার নিয়ম পরিবর্তিত হতে পারে। এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
এছাড়া এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে শিলাজিৎ কি তা জানতে পারবেন, সকালে খালি পেটে শিলাজিৎ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে, শিলাজিতের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে অনেক অজানা বিষয় জানতে পারবেন। শিলাজিৎ সম্পর্কে আরও অনেক বিষয় জানার জন্য এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।
ভূমিকা
শিলাজিৎ আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের এবং মানসিক চাপ থেকে মুক্তির জন্য যে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে তা আমরা অনেকেই এর আগে জানতাম না। আজকে আমরা এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে শিলাজিতের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে জেনে, খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে সেবন করার চেষ্টা করবো তাহলে আমরাও শিলাজিতের পরিপূর্ণ পুষ্টি উপাদান পেয়ে যাবো।
শিলাজিৎ কিনতে এবং সেবন বিধি জানতে এই লিংকে ক্লিক করুনঃ
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পানি অথবা দুধের সাথে মিশিয়ে শিলাজিৎ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে, তাহলে আমাদের শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং শরীরে এনার্জি আনতে সাহায্য করবে। সেবনের মাত্রা বয়স এবং শারীরিক অবস্থার প্রেক্ষিতে কম বেশি যেন না হয় সেজন্য আয়ুর্বেদ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে শিলাজিৎ খাওয়া এবং ব্যাবহার করা উত্তম।
শিলাজিৎ কি, এর প্রকারভেদ
শিলাজিতের উপকারিতা সম্পর্কে জানার আগে আমাদের আগে শিলাজিৎ সম্পর্কে জানতে হবে। আমরা অনেকেই শিলাজিৎ সম্পর্কে জানিনা। শিলাজিৎ হলো এক ধরণের পুরু, কালো-বাদামী খনিজ পদার্থ। যার উৎপত্তি হাজার বছরের পুরোনো হিমালয় পর্বতের ফাটল থেকে বেড়িয়ে আসা পুরাতন উদ্ভিদ। যার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ, ভিটামিন এবং অনেক পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ শক্তিশালী উপাদানের উৎস।
শিলজিৎ ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার যাবতীয় শারীরিক এবং মানসিক অবসাদ দূর করতে এবং শারিরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। সাধারনত দুই ধরনের উপায়ে শিলাজিৎ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একটি হলোঃ শিলাজিৎ রজন এর পাউডার আকারে ব্যবহার করা হয়ে থাকে এবং এটি দুধের সাথে মিশিয়ে ডোজ তৈরী করা হয়ে থাকে। অপরটিঃ কিছু কোম্পানি শিলাজিৎ ক্যাপসুল হিসেবে তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে।
এই ক্যাপসুল সাধারনত পানি দিয়ে খেতে পারেন। তবে শিলাজিৎ হিসেবে আমরা যেটা চিনে থাকি সেটা দেখতে অনেকটা পাথরের কয়লার মতো দেখতে। দেখতে পাথরের মতো হলেও এটা কিন্ত পাথরের মতো শক্ত না, বরং এটা অনেক নরম আকারের। খাওয়ার সময় একটা দানা আকারের যেভাবে থাকে সেই ভাবে খাওয়ার অনেক সুবিধা।
শিলাজিৎ খাওয়ার সঠিক নিয়ম
শিলাজিৎ খাওয়ার সঠিক নিয়ম-কানুন রয়েছে, সেই নিয়মে শিলাজিৎ খেতে পারলে এর পরিপূর্ণ পুষ্টি উপাদান পাওয়া যাবে। শিলাজিৎ খাওয়ার উত্তম এবং সঠিক নিয়ম হচ্ছে প্রতিদিন নিয়মিত ৩০০ থেকে ৫০০ মিলিগ্রাম করে খাওয়া। এছাড়া আয়ুর্বেদ ডাক্তারের সঠিক পরামর্শ হলো--১ থেকে ৩ ফোঁটা তরল শিলাজিৎ এক গ্লাস কুসুম কুসুম গরম দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ব্যাপক সাহায্য করবে।
তবে খেয়াল রাখতে হবে, শারীরিক অবস্থা এবং বয়স অনুযায়ী শিলাজিৎ সেবনের উত্তম ডোজ এবং খাওয়ার নিয়ম পরিবর্তন হতে পারে। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভালো হবে আয়ুর্বেদ ডাক্তারের পরামর্শে শিলাজিৎ সেবন করা। এছাড়া মটর দানার মতো শিলাজিতের একটা করে দানা বা রজন পানি কিংবা হালকা গরম দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়াই বেশি উত্তম
সকালে খালি পেটে শিলাজিৎ খাওয়ার উপকারিতা
শিলাজিৎ খেলে শরীরের যে ব্যাপক পরিবর্তন এবং উপকারিতা রয়েছে তা আমরা প্রায় সবাই জানি। তবে আমরা অনেকেই জানিনা যে, শিলাজৎ কখন বা কিভাবে খেলে উপকার এবং কার্যকারিতা বেশি পাওয়া যাবে। আশা করছি আজকের এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে শিলাজিৎ খাওয়ার উত্তম সময় এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
সেক্ষেত্রে আয়ুর্বেদ ডাক্তারের মতে, শিলাজিৎ সকালে খালি পেটে খাওয়াই বেশি উত্তম এবং এর কার্যকারিতাও অনেক ভালো। যারা মাঠে কাজ করে কিংবা যারা শারীরিক পরিশ্রম করে তাদের জন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটা দানা পরিমাণ শিলাজিৎ খাওয়া দারুণ উপকারী। কেননা, সকালে খালি পেটে শিলাজিৎ খেলে আপনার শরীরে ব্যাপক শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি উপাদান প্রদান করতে ব্যাপক কার্যকরী।
সকালে খালি পেটে একটা মটর দানা পরিমাণ শিলাজিৎ পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন, অথবা হালকা গরম দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে পানির চেয়ে দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারলে আরও বেশি উপকার পাওয়া যাবে। তাই নিয়মিত সকালে খালি পেটে শিলাজিৎ খাওয়ার অভ্যাস করুন এবং শারীরিক ও মানসিক ভাবে সর্বদা সুস্থ্যতা থাকুন।
শিলাজিতের ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
শিলাজিৎ খাওয়ার অনেকগুলো উপকারিতা রয়েছে। তারমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
- ১। নিয়ম করে শিলাজিৎ খাওয়ার ফলে আপনার যৌন স্বাস্থ্য বা যৌন শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং যৌন শক্তির কার্যকারী ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ব্যাপক সাহায্য করে।
- ২। শিলাজিৎ খাওয়ার ফলে আপনার বার্ধক্য পেছাতে অর্থাৎ শরীর মজবুত ও শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে।
- ৩। স্ট্রেস এবং উদ্বেগের উপাদান এবং লক্ষণগুলো থেকে রেহাই পেতে সাহায্য করে।
- ৪। শরীরের রক্ত স্বল্পতা দূর করতে এবং রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে ব্যাপক কার্যকরী।
- ৫। শিলাজিৎ পুরুষদের টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।
- ৬। শিলাজিৎ চুলের গোঁড়া মজবুত করতে এবং চুলের গুনগুত মান বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- ৭। উর্বরতা বাড়াতে এবং প্রজনন স্বাস্থ্য বাড়াতেও ব্যাপক সাহায্য করে থাকে।
- ৮। শারীরিক শক্তি এবং জীবনীশক্তি বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ৯। শিলাজিৎ রক্তশূন্যতা পূরণ করতে খুবই কার্যকরী।
- ১০। পুরুষদের জন্য শিলাজিৎ ১৮ উপকারিতা।
- ১১। মহিলাদের জন্য শিলাজিৎ ১৫ উপকারিতা।
- ১২। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য শিলাজিৎ দারুণ উপকারী।
- ১৩। শরীরের ওজন কমাতে শিলাজিৎ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- ১৪। পাকস্থলীর আলসারের জন্য শিলাজিৎ ব্যাপক কার্যকরী।
- ১৫। অর্শ দূর করতে শিলাজিৎ দারুণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
শিলাজিত খাওয়ার পার্শপ্রতিক্রিয়া
শিলাজিতের উপকারিতা এবং শিলাজিৎ খাওয়ার নিয়মের পাশাপাশি শিলাজিতের পার্শপ্রতিক্রিয়া বা ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। কেননা, এর পার্শপ্রতিক্রিয়া বা ক্ষতিকর দিক না জানা থাকলে শিলাজিতের উপকারিতার চেয়ে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই শিলাজিৎ ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জেনে রাখা উচিৎ।
- কাঁচা অবস্থায় শিলাজিৎ খাওয়া মানুষের জন্য উচিৎ না। কেননা কাঁচা অবস্থায় শিলাজিতের মধ্যে বেশ কিছু ক্ষতিকর ছত্রাকে দূষিত পদার্থ থাকতে পারে। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
- বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মতে, শিলাজিতের মধ্যে লোহার পরিমাণ বেশি থাকায় থ্যালাসেমিয়া রুগীদের শিলাজিত থেকে দূরে থাকাই বেশি ভালো।
- গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে শিলাজিৎ সেবন করার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।
- শিলাজিত খাওয়ার ফলে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বাড়ে, তাই যাদের গাঁটের বাতের ব্যাথা রয়েছে তাদের শিলাজিৎ খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।
শেষ কথা এবং লেখকের মন্তব্য
আমরা উপোরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে শিলাজিৎ কি সে সম্পর্কে জানতে পেরেছি, শিলাজিতের প্রকারভেদ সম্পর্কে, শিলাজিৎ খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে, সকালে খালি পেটে শিলাজিৎ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে, শিলাজিতের গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে, শিলাজিৎ সেবনের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পেরেছি।
তবে সতর্ক থাকতে হবে বাজারে বিভিন্ন রকমের শিলাজিৎ পাওয়া যায়, কেনার সময় সচেতন থাকবেন। আর শিলাজিৎ ব্যবহারে বা খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে সেবন করবেন। নিয়মের বাইরে কিংবা না জেনে শিলাজিৎ সেবন করলে উপকারের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকে। আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। আপনার যেকোন মতামত কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনার সর্বাঙ্গীন সুস্থ্যতা এবং মঙ্গল কামনা করছি, ধন্যবাদ আপনাকে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url