জয়ফল খাওয়ার নিয়ম-জয়ফলের ২০টি উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন।

জয়ফল খাওয়ার সঠিক নিয়ম-কানুন এবং জয়ফলের গুরুত্বপূর্ণ ২০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের জানা খুবই জরুরী। আমরা জানি যে, জয়ফল একটা সুগন্ধিযুক্ত গরম মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি তৈরী করতে এবং রান্নার কাজে জয়ফল ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও জয়ফল বিভিন্ন রোগের ঘরোয়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
জয়ফল খাওয়ার নিয়ম ও ২০টি উপকারিতা
আয়ুর্বেদের মতে, জয়ফল তিক্ত, কটুরস, উষ্ণ, রুচিকর, বলকর, লঘু , কফ, বাত কিংবা পিত্তের জন্য দারূণ উপকারী। মুখের অরুচি দূর করতে, কৃমি দূর করতে এবং বমি ভাব দূর করতে ব্যপক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই জয়ফলের এইসব আরও বিভিন্ন কার্যকারিতা বা উপকারিতা সম্পর্কে যারা জানেনা তাদের জন্য আজকের এই পোস্ট পড়া খুবই জরুরী।

ভূমিকা

জয়ফল রান্নার জন্য গরম মসলা ছাড়াও আমাদের বিভিন্ন রোগের ঘরোয়া ঔষধ হিসেবে দারূণ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। যাদের গায়ের রঙ কালো, কৃষ্ণবর্ণতা তাদের এই কালচে ভাব কিংবা কৃষ্ণবর্ণতা কমিয়ে আনতে জয়ফল ব্যপক সাহায্য করে থাকে। পুরোনো পেটের অসুখ সারাতে, পেটফাঁপা দূর করতে, খিঁচুনি দূর করতে, মুখের দূর্গন্ধ দূর করতে, দাঁতের ব্যাথা দূর করতে জয়ফল অনেক উপকারী।


খাবার তাড়াতাড়ি হজম করতে, মল রোধ করতে, রক্ত আমাশাযুক্ত পেটের অসুখ সারাতে, বমি বমি ভাব দূর করতে জয়ফলের চূর্ণ পরিমাণ মতো খেতে পারলে অনেক রোগের উপশম করতে সাহায্য করে। যাদের প্রকৃতি শীতল তারা জয়ফল খেলে ঠান্ডার জন্য যেসব অসুখ হয় সেগুলোর উপশম করে রতিশক্তি বাড়াতে এবং মন প্রফুল্ল রাখতে ব্যপক সাহায্য করে থাকে।

জয়ফল খাওয়ার নিয়ম

জয়ফল খাওয়ার কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে যা মেনে আমাদের জয়ফল খাওয়া উচিৎ। কেননা নিয়ম না জেনে কোন কিছু খেলে বা ব্যবহার করলে সেই জিনিসের উপকারের থেকে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়। তাই জয়ফলের ক্ষেত্রেও নিয়ম জেনে জয়ফল কিংবা জয়ফলের গুঁড়া বিভিন্ন মসলা বা খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয়ে থাকে। 


বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর আগে কুসুম কুসুম গরম দুধের সাথে কিছু মধু মিশিয়ে তার সাথে অল্পকিছু এলাচ এবং জয়ফলের গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারলে আপনার শরীরে ক্লান্তি দূর করে নিমিষেই এনার্জি আনতে সাহায্য করবে। উপোরোক্ত নিয়মে এবং পরিমাণ মতো প্রতিদিন জয়ফল খেতে পারলে আপনার শরীরের স্বাভাবিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও ব্যপক সাহায্য করে থাকে।

জয়ফলের গুরুত্বপূর্ণ ২০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা

জয়ফল শুধুমাত্র গরম মসলা হিসেবেই ব্যবহৃত হয়না এটা বিভিন্ন রোগের ঘরোয়া ঔষধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। জয়ফলের এই গুরুত্বপূর্ণ ২০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে কিন্ত আমরা অনেকেই জানিনা। নিম্নে জয়ফলের ২০টি উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হইলোঃ


  1. নিয়মিত এবং পরিমাণ মতো জয়ফল খেতে পারলে বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রন করতে, এমনকি ডায়াবেটিস সারাতে সাহায্য করে।
  2. গেঁটে বাতে নিয়মিত জয়ফলের তেল মালিশ করলে অনেক উপকার পাওয়া সম্ভব।
  3. চোখের চুলকানি দূর করতে জয়ফলের প্রলেপ লাগালে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
  4. জয়ফল শুকনো খোলায় ভেজে খেতে পারলে পায়খানা বন্ধ হতে সাহায্য করবে।
  5. জয়ফলের সাথে তেল মিশিয়ে কানে দিলে কান কালা হওয়া বন্ধ হতে সাহায্য করবে।
  6. জয়ফলের সুরমা চোখে পড়লে চোখের বিভিন্ন রোগ সারাতে সাহায্য করে থাকে।
  7. জয়ফল খাওয়ার ফলে ঘামের দূর্গন্ধ দূর করতে এবং বায়ুর আধিক্য কমে যেতে সাহায্য করে।
  8. জয়ফল ভাতের ফেনে ঘষে খাওয়ালে হেঁচকি ওঠা বন্ধ করতে এবং বমি ভাব সারাতে সাহায্য করে।
  9. জয়ফল ও শুকনো আদা গাওয়া ঘিয়ে ঘষে বাচ্চাদের চেটে খেতে দিলে বাচাদের সর্দির জন্য পেটের যাবতীয় অসুখ সারাতে সাহায্য করবে।
  10. জয়ফলের চূর্ণ গুঁড়ে মিশিয়ে ছোট ছোট গুলি করে সেই গুলি আধা ঘন্টা অন্তর খাওয়ালে এবং তার সাথে একটু গরম পানি খাওয়ালে কলেরার বা আন্ত্রিক রোগের মল নিষ্কাশন বন্ধ হতে সাহায্য করে।
  11. নিয়মিত জয়ফল চিবিয়ে খেলে মুখে দূর্গন্ধ দূর করে সুগন্ধি আনতে সাহায্য করে থাকে।
  12. জয়ফলের এক বা দুই ফোটা তেল বাতাসার বা চিনির সাথে মিশিয়ে খেতে পারলে আপনার পেট ব্যাথা এবং গ্যাসের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
  13. একটা জয়ফলের চতুর্থাংশ গুঁড়া পানিতে মিশিয়ে খেতে পারলে অনেক ভালো ঘুম হতে সাহায্য করবে।
  14. জয়ফল ঘষে তার প্রলেপ কপালে লাগালেও ঘুম ভালো হতে সাহায্য করবে।
  15. জয়ফলের তেল সরিষার তেলের সাথে মিশিয়ে শরীরের কোন স্থানের ব্যাথায় কিংবা ফোলা যায়গায় প্রলেপ দিলে ব্যাথা এবং ফোলা কমে যেতে সাহায্য করবে।
  16. জয়ফলের তেলে ভেজানো তুলো দাঁতে রাখলে দাঁতের পোকা মরে যেতে এবং দাঁতের ব্যাথা কমে যেতেও সাহায্য করে থাকে।
  17. জয়ফলের তেল দিয়ে তৈরী করা মলম লাগালে ব্রণ ভালো হতে এবং ঘা ভালো হতেও সাহায্য করে।
  18. হাকিমির মতে, জয়ফল স্তন্যবর্ধক অর্থাৎ জয়ফল মায়েদের স্তনের দুধ বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
  19. নিয়মিত জয়ফল খাওয়ার ফলে আপনার হার্ট মজবুত রাখতে সাহায্য করবে, যার ফলে আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
  20. নিয়মিত জয়ফল খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

জয়ফলের অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক

জয়ফলের উপকারিতা বা কার্যকারিতা সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। জয়ফল খাওয়ার যে ব্যপক উওকারিতা রয়েছে তা আমরা প্রায় সবাই জানি। কিন্ত জয়ফলের যে কিছু অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক রয়েছে তা আমরা অনেকেই জানিনা। জয়ফলের অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জেনে আমাদের সাবধান থাকতে হবে এবং নিরাপদে থাকতে হবে। 


অতিরিক্ত মাত্রায় বা পরিমাণে বেশি খেলে জয়ফলের অপকারিতা বা ক্ষতি হবে এটা স্বাভাবিক। বেশি করে জয়ফল খেলে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শরীরে জ্বর হলে, শরীরে দাহ থাকলে, শরীর জ্বালা করলে, ব্লাডপ্রেসার বেড়ে গেলে, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে জয়ফল না ক্ষাওয়াই বেশি ভালো।

শেষ কথা এবং লেখকের মন্তব্য

আমরা উপোরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে জয়ফল খাওয়ার সঠিক নিয়ম, জয়ফলের গুরুত্বপূর্ণ ২০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারলাম। নিয়মিত জয়ফল খাওয়ার ফলে মাথার যেকোন রোগ, ব্রণ, শ্বাস, সাইনাস, সর্দি, এমনকি হার্টের সমস্যা দূর করতে এবং হ্রদরোগের ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে ব্যপক সাহায্য করে থাকে। 


আজকের এই আর্টিকেলটি শুরূ থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। পোস্ট সম্পর্কে আপনার যেকোন মতামত কমেন্ট করে জানাবেন। আমাদের ওয়েবসাইট ফলো দিয়ে পাশে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url