জিরার ২০টি উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
জিরার ২০টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা এবং জিরার কিছু ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। জিরা আমরা প্রায় সবাই চিনে থাকি, বিশেষ করে মহিলারা জিরার সাথে বেশি পরিচিত। কারণ, জিরা আমাদের প্রতিদিনের রান্নায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। রান্নায় জিরা ব্যবহার করার ফলে রান্না একটি রুচিকর এবং সুস্বাদু হয়ে থাকে।
এছাড়া আজকের এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে আপনি জিরার অনেক ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে জানতে পারবেন। সকালে খালি পেটে জিরার পানি খেলে কি উপকার পাওয়া যাবে, কাঁচা জিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে, জিরা খাওয়ার ক্ষতিকর দিক বা জিরার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ভূমিকা
আমরা জিরার ব্যবহার সম্পর্কে শুধুমাত্র মসলা হিসেবেই চিনে থাকি। কিন্ত জিরা যে বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে তা আমরা অনেকেই জানিনা। জিরা সাধারণত এক প্রকার শীতল। শরীরে কোন কারণে যদি গরম ভাব আসে কিংবা শরীরে উষ্ণভাব বেড়ে যায় তাহলে জিরা খেলে গরম ভাব কমে যেতে সাহায্য করে।
সেজন্যই জিরা সম্পর্কে লোকের উক্তিটি রয়েছে তা হলো-- শরীর ঠান্ডা করতে জিরা, শরীর গরম করতে হীরা। সুতরাং আমরা আজকে এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জিরা মসলা ছাড়াও যে ঔষধি উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। জিরা শূলব্যাথা দূর করতে সাহায্য করে। জিরা উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে, বাতের ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করে,
কফ ভালো করতে সাহায্য করে থাকে, অরুচি নাশ করতেও ব্যাপক সাহায্য করে থাকে। আয়ুর্বেদের মতে, জিরা কটু, তিক্ত, মধুর, সুগন্ধযুক্ত, কিঞ্চিত উষ্ণবীর্য, হজম করতে সাহায্য করে, মল রোধ করতে সাহায্য করে থাকে। জিরার এমন আরও বিস্তারিত উপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।
সকালে খালি পেটে জিরার পানি খাওয়ার উপকারিতা
সকালে খালি পেটে জিরার পানি খাওয়ার ব্যাপক উপকারিতা রয়েছে। জিরা খাওয়ার উপযুক্ত সময় বলতে তেমন কোন নিয়ম-কানুন নেই। সকালে খালি পেটেও খেতে পারেন এবং রাতে খাবার পরও খেতে পারেন। তবে ভরা পেটে জিরা খেলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই উত্তম ব্যবস্থা হলো রাতে এক গ্লাস পানিতে কয়েকটা জিরা ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেতে পারলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
সকালে খালি পেটে জিরা ভেজানো পানি নিয়মিত খেতে পারলে আপনার শরীরে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করবে, শরীরে গ্লূকোজের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে এবং চর্বি দূর করতে ব্যাপক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া নিয়মিত জিরার পানি সকালে খালি পেটে খাওয়ার অভ্যাস করলে আপনার বদহজম দূর করতে সাহায্য করবে, এমনকি বদহজমের ফলে যে ডায়রিয়া,
বমিভাব এবং গ্যাসের কোন সমস্যা থাকলে তা প্রতিরোধ করতে ব্যাপক সাহায্য করে থাকে। তাই এসব সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য এবং শারিরীক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য কিংবা পেটের যেকোন সমস্যা সমাধানে সকালে খালি পেটে জিরার পানি খাওয়ার কোন তুলনা নাই। সুতরাং স্বাস্থ্য সচেতনায় প্রতিদিন নিয়মিত সকালে খালি পেটে জিরার পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
কাঁচা জিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
কাঁচা জিরা চিবিয়ে খাওয়ার অনেক উপকার রয়েছে। জিরাকে আমরা শুধুমাত্র মসলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। কিন্ত জিরার অনেক গুনাগুন এবং কার্যকারিতা রয়েছে। সেই বিষয়ে যদি আমরা জেনে সেইভাবে প্রয়োগ করতে পারি তাহলে আমরাও জিরার পুষ্টিগুন এবং বিভিন্ন রোগের যে নিরামক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে সে সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবো।
যদি কারো পেটের ব্যাথা অনুভব হতে থাকে বা কারও যদি গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়, গ্যাসের মেডিসিন পাওয়া না গেলে উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে কয়েকটি জিরার দানা মুখে নিয়ে চিবিয়ে খেতে পারলে আপনার পেটের ব্যাথা এবং গ্যাসের সমস্যা দূর হয়ে যেতে সাহায্য করবে। এছাড়া কাঁচা জিরা চিবিয়ে খাওয়ার ফলে যে উপকার পাবেন তা হলোঃ
- কাঁচা জিরা চিবিয়ে খেলে খাবার তারাতারি হজম করতে সাহায্য করবে অর্থাৎ হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
- কাঁচা জিরা চিবিয়ে খেতে পারলে ত্বক সুন্দর রাখতে সাহায্য করবে।
- কাঁচা জিরা চিবিয়ে খাওয়ার ফলে আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে।
- কাঁচা জিরা চিবিয়ে খাওয়ার ফলে শ্বাসতন্ত্রের ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করবে।
- কাঁচা জিরা চিবিয়ে খেলে সুন্দর ঘুম হতে সাহায্য করবে।
- কাঁচা জিরা চিবিয়ে খাওয়ার ফলে টক্সিন দূর করতেও সাহায্য করবে।
- কাঁচা জিরা চিবিয়ে খাওয়ার ফলে পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর করতে ব্যাপক সাহায্য করবে।
জিরার ২০টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা
জিরার বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে যা আমরা অনেকেই জানিনা। আমরা জিরার ব্যবহার হিসেবে মসলা বলেই চিনে থাকি বা জেনে থাকি। কিন্ত জিরার আরও অনেক গুনাগুন রয়েছে এবং বিভিন্ন রোগের শেফা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। জিরার অনেকগুলো উপকারিতা রয়েছে, তারমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ২০টি উপকারিতা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হইলোঃ
- জিরার গুঁড়ার সাথে পুরোনো গুঁড় মিশিয়ে খেতে পারলে পুরোনো জ্বর, বিষম জ্বর কিংবা ম্যালেরিয়া সারাতে সাহায্য করবে।
- ক্ষতিকর বিছের কামড়ে জিরার বাটা সৈন্ধক লবণ ও ঘিয়ের সাথে মিশিয়ে প্রলেপ দিলে জ্বালা কমে যেতে সাহায্য করবে এবং ব্যাথাও কমে যাবে।
- চিকিৎসকদের মতে, জিরা বায়ুনাশক, উষ্ণ এবং পাচক। স্বরভঙ্গ, অজীর্ন, পেটের অসুখ, পেটফাঁপা, এমনকি যাবতীয় পেটের অসুখ সারাতে জিরা কার্যকরী ঔষধ হিসেবে কাজ করে থাকে।
- জিরা পানিতে ভিজিয়ে সেই পানি চোখে লাগালে চোখের যাবতীয় সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- পাকস্থলী বা মূত্রাশয়ে রক্ত বা পাথর জমলে নিয়মিত জিরা খাওয়ার ফলে সেই পাথর বেরিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
- সির্কা বা ভিনেগারের সাথে জিরা খেতে পারলে হেঁচকি ওঠা বন্ধ হতে সাহায্য করবে।
- নিয়মিত জিরা চিবিয়ে খেলে পাকস্থলীর কৃমি বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে।
- নিয়মিত জিরা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
- নিয়মিত জিরা খাওয়ার ফলে শুক্রাণু বা বীর্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
- জিরা খাওয়ার ফলে স্তন্যদুগ্ধ বৃদ্ধি করতেও ব্যাপক সাহায্য করে থাকে।
- জিরা চূর্ণ করে কোন ক্ষতস্থানে লাগালে ক্ষত তারাতারি শুকিয়ে যেতে সাহায্য করে।
- এক চা চামচ জিরার গুঁড়া ২ চা চামচ করলার রসে মিশিয়ে নিয়ম করে খেতে পারলে শীতজ্বর ভালো করতে সাহায্য করে।
- জিরা ভালো করে চিবিয়ে চোখে লাগালে চোখের সমস্যা দূর হতে সাহায্য করবে।
- জিরার গুঁড়ার সাথে সমপরিমাণ ধনের গুঁড়া নিয়ে তার সাথে চিনি মিশিয়ে খেতে পারলে বুক জ্বালা করা দূর করতে সাহায্য করে।
- গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে জিরা চিবিয়ে খেলে কিছুক্ষনের মধ্যে গ্যাসের সমস্যা দূর হয়ে যেতে সাহায্য করে, হেঁচকি উঠলে জিরা খেলে হেঁচকি বন্ধ হয়ে যাবে।
- নিয়মিত জিরা খাওয়ার ফলে শরীরের গরম হওয়া ভাব কমে যেতে সাহায্য করে।
- যাদের রাতকানা রোগের সমস্যা রয়েছে তাদের উচিৎ নিয়মিত জিরা খাওয়া, তাহলে এই রাতকানা রোগ থেকে রেহাই পাবে।
- জিরা মেশানো পানি চোখে দিলে চোখের জ্যোতি বাড়াতে সাহায্য করবে।
- জিরা পিষে সেই প্রলেপ লাগিয়ে বাঁধন স্র্যাবমুক্ত অর্শ থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে।
- জিরার গুঁড়ার সাথে চিনি দিয়ে একটু ভাতের ফ্যানের সাথে মিশিয়ে খেলে মহিলাদের শ্বেতপ্রদর ও রক্তপ্রদর কমে যেতে সাহায্য করে থাকে।
ওজন কমাতে জিরার উপকারিতা
ওজন কমাতে জিরা ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। যারা স্বাস্থ্যের দিক থেকে অনেক মোটা, যারা শরীর বেড়ে যাওয়া নিয়ে অনেক চিন্তিত তাদের চিন্তার কোন কারন নাই। কেননা, নিয়মিত জিরা খাওয়ার ফলে আপনার মোটা স্বাস্থ্য কমিয়ে দিতে বা আপনার শরীরের ওজন কমাতে ব্যাপক সাহায্য করে থাকে। এছাড়া নিয়মিত জিরা খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের মেদ ভা ভুঁড়ি কমাতেও ব্যাপক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
আপনি যদি আপনার শরীরের ওজন কমাতে চান, তাহলে রান্না করার জিরার থেকে সকালে কিংবা রাতে কাঁচা জিরা চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। দেখবেন নিয়মিত জিরা খাওয়ার ফলে আপনার ওজন কমে যাবে এবং শারিরীক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। তাই ওজন কমিয়ে বা স্বাভাবিক শরীরের গঠন রাখতে নিয়মিত জিরা খাওয়া খুবই জরুরী।
জিরার ক্ষতিকর দিক বা জিরার অপকারিতা
আমরা জিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারলাম, সকালে খালি পেটে জিরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারলাম, জিরার গুরুত্বপূর্ণ ২০টি উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারলাম। এবার আমরা জিরার কিছু ক্ষতিকর দিক বা জিরার অপকারিতা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো। আমরা সবাই জানি যে, অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো কিছু উপহার দেয়না,
ঠিক তেমনি খাবারের মধ্যেও অতিরিক্ত খেলে তার উপকারের থেকে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি দেখা যায়। যেমন, অতিরিক্ত জিরা খাওয়ার ফলে যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের ডায়াবেটিসের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের জিরা কম খাওয়াই বেশি ভালো। এছাড়া অতিরিক্ত জিরা খাওয়ার ফলে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গিয়ে বড় ধরণের সমস্যা তৈরী হতে পারে।
যার ফলে আপনার রক্তচাপ কমে গিয়ে পেশারও কমে যেতে পারে। অতিরিক্ত জিরা খেলে আপনার শরীর এবং মুখমন্ডল হলুদ হয়ে যেতে পারে। শরীর রোগা এবং কৃশ হয়ে যেতে পারে। তাই অতিরিক্ত জিরা খাওয়া এবং অতিরিক্ত জিরার তেল ব্যবহার থেকে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ।
শেষ কথা এবং লেখকের মন্তব্য
আমরা উপোরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে জিরার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে, যেমন-সকালে খালি পেটে জিরা খাওয়া বা জিরার পানি খাওয়ার উপকারিতা, জিরার গুরত্বপূর্ণ ২০টি উপকারিতা, কাঁচা জিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা, ওজন কমাতে জিরার উপকারিতা, জিরার ক্ষতিকর দিক বা জিরার অপকারিতা ইত্যাদি অনেক অজানা তথ্য জানতে পারলাম।
হাকিমির মতে, জিরা পেটের ব্যাথা, পেটের বায়ু ও পেট ফাঁপা উপশম করতে সাহায্য করে। তবে খেয়াল রাখা উচিৎ জিরার ব্যবহার যেন সঠিক মাত্রায় এবং সঠিক নিয়ম অনুসারে হয়ে থাকে। কেননা অতিরিক্ত জিরা খাওয়া এবং অতিরিক্ত জিরার ব্যবহার আমাদের জন্য ক্ষতির কারন না হয়ে যায়। আজকের এই আর্টকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
পোস্টটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। পোস্ট সম্পর্কে আপনার যেকোন মতামত কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। সবার আগে এমন অজানা আরও পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো দিয়ে রাখবেন, সর্বদা আমাদের পাশেই থাকবেন, ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url