গোলমরিচ খাওয়ার নিয়ম-গোলমরিচের ৩০টি উপকারিতা সম্পর্কে জানুন।
গোলমরিচ খাওয়ার নিয়ম এবং গোলমরিচের গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের জানা খুবই প্রয়োজন। কেননা আমরা নিত্যদিনের রান্নায় গোলমরিচ ব্যাবহার করে থাকি। কাজেই গোলমরিচের তীক্ষ্ণ স্বাদের কথা আমাদের সবারই জানা। যারা রান্নায় কাঁচা মরিচ খেতে পারেনা তাদের জন্য ব্যঞ্জন ঝালের জন্য গোলমরিচ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এছাড়া গোলমরিচের ঔষধী গুনাগুন সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার, সাদা গোলমরিচের উপকারিতা সম্পর্কে জানা জরুরী এসব বিষয়ে জানার জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো। চলুন তাহলে গোলমরিচের বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
ভূমিকা
গোলমরিচ স্বাধারনত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটা কালো গোলমরিচ এবং অপরটি সাদা গোলমরিচ। অর্ধ পাকা দানাগুলো শুকিয়ে গেলেই কালো গোলমরিচ হয়ে যায়। গোলমরিচের দানাগুলো যখন পুরোপুরি পেকে যায় তখন উপরের কালো খোসা ছাড়িয়ে দিলেই সাদা গোলমরিচ পাওয়া যায়। গুনাগুনের দিক থেকে কালো গোলমরিচের চেয়ে সাদা গোলমরিচের মূল্যই অনেক বেশি। অনেকে রান্নায় সাদা গোলমরিচ ব্যবহার করে থাকেন।
কারণ, গোলমরিচের চূর্ণ ব্যবহার করলে তা ব্যঞ্জনে কালো কালো দেখায়, প্রচ্ছন্ন থাকে না, দেখতে ভালো লাগেনা, কিন্ত সাদা গোলমরিচের গুঁড়ো ব্যঞ্জনে মিশে যায় অর্থাৎ প্রচ্ছন্ন থাকে, আলাদা করে বোঝা যায়না। সাদা গোলমরিচের অবশ্য কালো গোলমরিচের চেয়ে দাম একটু বেশি। তাই সুস্থ্য থাকতে আমাদের প্রতিদিনের রান্নায় কালো গোলমরিচ ব্যবহার করাই বেশি উত্তম। তাহলে চলুন গোলমরিচের গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি উপকারিতা সম্পর্কে জেনে আসি।
গোলমরিচ খাওয়ার নিয়ম
গোলমরিচ খাওয়ার নিয়ম রয়েছে, যা সম্পর্কে আমরা অনেকেই হয়তো জানিনা। গোলমরিচ খাওয়া অনেক উপকার, কিন্ত আমরা আগে ভাবতাম গোলমরিচ শুধুমাত্র মসলার জন্য ব্যাবহার করা হয়। গোলমরিচ চিবিয়ে খেতে পারলে আরও বেশি উপকার, যদি গোলমরিচের ঝাঁঝ সহ্য করা যায়। সকালে খালি পেটে ২/৩ টা গোলমরিচের দানা মুখে দিয়ে চিবিয়ে খেতে পারেন।
শুধু গোলমরিচ খেতে সমস্যা হলে মধু দিয়ে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে গরম পানিতে দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে ২ চা চামচ মধু এবং ১ চামচ গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারেন। যেকোন তরকারিতে মসলা হিসেবে গোলমরিচ ব্যাবহার করা যায়, এতে তরকারী আরও সুস্বাদু করতে সাহায্য করে।
আবার অনেকের গোলমরিচের ঝাঁঝ সহ্য হয়না, তাই তারা গোলমরিচের পরিমাণ কমিয়ে কাঁচা মরিচ দিয়ে রান্না করে খেতে বেশি পছন্দ করে থাকে। মসলা ছাড়াও গোলমরিচ দুধ, চিনি, মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারলে শরীরের অনেক রোগ সারাতে সাহায্য করে থাকে। তাই নিয়মিত গোলমরিচ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
সাদা গোলমরিচের উপকারিতা
সাদা গোলমরিচেরও অনেক গুলো উপকারিতা রয়েছে। যেহেতু আমরা গোলমরিচের সাথে সবাই পরিচিত, বিশেষ করে মহিলারা বেশি পরিচিত। কেননা তারা রান্নার স্বাদ বাড়াতে মসলা হিসেবে গোলমরিচ ব্যাবহার করে আসছে। গোলমরিচের মধ্যে সাদা এবং কালো দুই জাতের গোলমরিচ রয়েছে। আয়ুর্বেদের মতে, কালো গোলমরিচের ন্যায় সাদা গোলমরিচেরও অনেক উপকারিতা রয়েছে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে অনেক ভালো।
সাদা গোলমরিচে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ফাইবার রয়েছে। নিয়মিত সাদা গোলমরিচ খাওয়ার ফলে হার্টের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া সাদা গোলমরিচ খাওয়ার ফলে বাতের ব্যাথা দূর করতে, ঠান্ডা লাগার প্রাদুর্ভাব দূর করতে, এমনকি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। সাদা গোলমরিচের মধ্যে এন্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরকে ক্ষতিকর জীবাণূ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
গোলমরিচের গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি উপকারিতা
গোলমরিচের গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। আমরা প্রতিদিনের রান্নায় গোলমরিচ ব্যবহার করে থাকি। কিন্ত আমরা অনেকেই জানিনা যে গোলমরিচ আমাদের জন্য শুধুমাত্র রান্নার মসলা হিসেবে নয়, গোলমরিচ আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। চলুন তাহলে গোলমরিচের গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাকঃ
- গোলমরিচের গুঁড়ো ঘি বা চিনি এবং মধুতে মিশিয়ে চেটে খেতে পারলে সব রকমের কাশি কমে যেতে সাহায্য করবে।
- গোলমরিচ পানিতে মিশিয়ে খেতে পারলে আমাশার উপশম করতে সাহায্য করবে।
- গোলমরিচ দইয়ের সাথে ঘষে চোখে কাজলের মতো পরলে রাতকানা রোগ থেকে মুক্তি মিলবে।
- মুখের লালার সাথে গোলমরিচ ঘষে চোখে কাজলের মতো পরতে পারলে ঘুম আসতে সাহায্য করবে।
- একটা আস্ত গোলমরিচে ছুঁচ ফুটিয়ে পিদিমের শিখায় ধরলে যে ধোঁয়া বের হয় তা শুঁকলে হেঁচকি ওঠা বন্ধ করতে সাহায্য করবে।
- পেট ফাঁপা, একটানা পেটের অসুখ বা পুরোনো পেটের অসুখে এবং পাকাশয়ের দূর্বলতায় গোলমরিচ খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
- বাচ্চাদের শোথরোগে মাখনের সাথে মিশিয়ে গোলমরিচের প্রলেপ দিলে অনেক আরাম পাবে।
- গোলমরিচের প্রলেপ দিলে যাদের দাঁতের ব্যাথা আছে সেই ব্যাথা সারাতে সাহায্য করবে।
- গলায় ঘা বা ক্ষত হলে এবং আলজিভ বেড়ে গেলে গোলমরিচের রস দিয়ে কুলি করলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
- ম্যালেরিয়া, মস্তিষ্কের সর্দি, টাকরার ক্ষত এবং কলেরা রোগে গোলমরিচের ব্যাবহার করলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
- গোলমরিচের রস করে খেতে পারলে কলেরার বমি, মলত্যাগ, পেটফাঁপা প্রভূতি রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।
- গোলমরিচ গরম পানিতে ভিজিয়ে সেই পানি খেলে প্রমেহ এবং শূল-ব্যাথা কমে যেতে এবং ব্যাথা দূর করতে ব্যপক সাহায্য করে থাকে।
- বিষাক্ত কোন পোকা কামড় দিলে সেই যায়গায় গোলমরিচের গুঁড়োর সাথে ভিনিগার মিশিয়ে লাগালে বিষ নেমে যেতে এবং ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করবে।
- মাথার চুল গোজাতে এবং চুল পড়া বন্ধ করতে পেয়াজ ও লবণের সাথে গোলমরিচের প্রলেপ দিলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
- চোখে ঝাপসা দেখা এবং চোখে ছানি পড়া থেকে সুফল পেতে গোলমরিচের প্রলেপ কাজলের মতো লাগালে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
- গোলমরিচ বেটে ফোঁড়ায় লাগালে ফোঁড়া তাড়াতাড়ি পেকে যেতে এবং শুকিয়ে যেতে সাহায্য করে।
- লবণ ও গোলমরিচ চূর্ণ দিয়ে দাঁতে মাজন করলে দাঁত শক্ত, মজবুত এবং পোকা ধরা থেকে নিরাপদ থাকবে।
- গোলমরিচ, রসুন এবং ঘি মিশিয়ে খেতে পারলে বায়ুর উপশম দূর করতে সাহায্য করে।
- জীর্ণ জ্বর অর্থাৎ পুরোনো জ্বরে গোলমরিচের রস খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
- অতিরিক্ত খাওয়ার পর খাবার গুলো তাড়াতাড়ি হজম করানোর জন্য গোলমরিচ খেলে খাবার সহজে হজম করতে ব্যাপক সাহায্য করে থাকে।
- গরম দুধের সাথে গোলমরিচ আর চিনি মিশিয়ে খেতে পারলে সর্দি, কাশি সারাতে সাহায্য করবে।
- প্রায় পনেরটি গোলমরিচ মিহি করে পিষে নিয়ে প্রতিদিন মধু মিশিয়ে চেটে খেলে শ্বাসরোগের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- চিরতার সাথে গোলমরিচ খেলে জ্বর ছেড়ে যেতে সাহায্য করে এবং অলসতা ভাব দূর করতেও সাহায্য করে।
- গোলমরিচের গুঁড়ো, তুলসি পাতার রস ও মধু মিশিয়ে খেতে পারলে ম্যালেরিয়া রোগ সারাতে সাহায্য করে।
- আদা এবং লেবুর রসের সাথে গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে পেট ব্যাথা কমে যেতে সাহায্য করবে।
- গোলমরিচের গুঁড়ো, চিনি আর ঘি একসাথে মিশিয়ে খেতে পারলে মাথা ঘোরা সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
- গোলমরিচ, পিপুল ও হরীতকীর চূর্ণ মধু মিশিয়ে চেটে খেতে পারলে বদহজম এবং গ্যাসের সমস্যা দূর হয়ে যেতে সাহায্য করবে।
- গোলমরিচের গুঁড়ো, দই এবং পুরোনো গুঁড় মিশিয়ে খেলে নাক থেকে রক্ত পোড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
- বাচ্চাদের প্রতিদিন গোলমরিচের গুঁড়া, ঘি আর চিনি মিশিয়ে চেটে খেতে দিলে তাদের খিদে বাড়াতে সাহায্য করবে, দূর্বলতা দূর হতে সাহায্য করবে।
- ইউনানির মতে, নিয়মিত গোলমরিচ খাওয়ার ফলে হৃদরোগ বা হার্টের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
গোলমরিচের ঔষধি গুন
গোলমরিচের অনেক গুলো ঔষধি গুনাগুন রয়েছে। আমরা শুধুমাত্র যে মসলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি এজন্য আমরা মনে করি এটা একটা মসলা ছাড়া আর কিছুনা। কিন্ত, বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের অন্যতম সেরা মসলা হিসেবে গোলমরিচকে বিবেচিত করা হয়। কেননা, গোলমরিচে এমন অনেক গুনাবলি রয়েছে যা আমাদের শারিরীক অনেক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
সাধারণত, জ্বর, সর্দি, কাশি, ম্যালেরিয়া, পেট ফাঁপা, পেট ফুলে যাওয়া প্রভূতি সমস্যা দূর করতে দারুণ কার্যকারী ভূমিকা পালন করতে সাহায্য করে। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, ক্ষুধামন্দা, রক্তস্বল্পতা দূর করতে, দাঁতের রোগ নিরাময়ে, ডায়রিয়া রোগ সারাতে, এমনকি হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে নিরাপদে থাকতে গোলমরিচ ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে সাহায্য করে।
লেখকের মন্তব্য এবং শেষ কথা
আমরা উপোরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে গোলমরিচ খাওয়ার নিয়ম, গোলমরিচের গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি উপকারিতা সম্পর্কে, সাদা গোলমরিচের উপকারিতা, গোলমরিচের ঔষধী গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা জানতে পারলাম। এমন অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছি যা আমাদের আগে জানা ছিলনা। হাকিমি বা ইউনানি মতে, গোলমরিচ কফ, শরীর ফুলে যাওয়া, শ্বাস-কাশি, বুকের ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করে।
সুতরাং আমরা এখন থেকে গোলমরিচ মসলাতে ব্যাবহার করার পাশাপাশি আমাদের নানা সমস্যার সমাধানে গোলমরিচ ব্যাবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলবো। আজকের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। এই পোস্টটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। লেখা সম্পর্কে আপনার যেকোন মতামত কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। আমাদের ওয়েবসাইট ফলো দিয়ে পাশে থাকবেন এমন আরও অনেক বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য, ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url