দারচিনি খাওয়ার নিয়ম-দারচিনির ১৫টি উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন।
দারচিনি খাওয়ার নিয়ম এবং দারচিনির বিভিন্ন উপকারিতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ১৫ট উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই পোস্টের মূল আলোচনার বিষয়। যেহেতু প্রাচীনকাল থেকেই আমরা খাবারের স্বাদ এবং সুগন্ধ বৃদ্ধি করার জন্য গরম মসলা হিসেবে দারচিনি ব্যবহার করে আসছি। সুতরাং দারচিনি যে শুধুমাত্র মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ঠিক তা নয়, দারচিনির যে আরও বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে বা বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তির ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে তা আমাদের জানা খুবই জরুরী।
এছাড়া দারচিনি গুঁড়ার উপকারিতা কেমন, রাতে দারচিনি খাওয়ার উপকারিতা কেমন, দারচিনি এবং মধু একসাথে খাওয়ার উপকারিতা কেমন, দারচিনি খেলে আমাদের কোন ক্ষতি হবে কিনা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে এই আর্টিকেলটি পড়ে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন দারচিনির গুনাগুন এবং কার্যকারিতা বা উপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ভূমিকা
দারচিনি ব্যবহার করার পর শুধুমাত্র মুখের স্বাদ বাড়ায় তা কিন্ত নয়, সাথে কন্ঠশুদ্ধি বাড়াতেও ব্যপক সাহায্য করে থাকে। আমরা দারচিনিকে শুধুমাত্র মসলা হিসেবে চিনে থাকি কিন্ত দারচিনির বিভিন্ন ঔষধি গুনাগুন যে রয়েছে তা আমরা অনেকেই জানিনা। দারচিনি সাধারণত দুই ধরনের পাওয়া যায়--মোটা ছাল এবং পাতলা ছাল বিশিষ্ট।
মোটা ছালের দারচিনিয় আয়ুর্বেদের মতে-লঘু, উষ্ণ, তীক্ষ্ণ, মধুর, রুক্ষ এবং পিত্তকারক। দারচিনি অত্যন্ত কার্যকর সুগন্ধি ঔষধি। পাতলা ছালের দারচিনি আয়ুর্বেদের মতে-মধুর, তেতো, তীক্ষ্ণ, সুগন্ধি, বীর্যবর্ধক, শরীরের বর্ণ উজ্জল করে এবং তৃষ্ণার উপশম করতে ব্যপক সাহায্য করে থাকে। আজকের এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি দারচিনির বিভিন্ন কার্যকারিতা এবং ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে জানতে পারবেন।
দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম
দারুচিনি খাওয়ার কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে, সেই নিয়ম মেনে দারচিনি খেতে পারলে দারচিনির পরিপূর্ণ পুষ্টি উপাদান পেতে সাহায্য করবে। দুই ইঞ্চির মতো দারচিনি নিয়ে সাথে দুই কাপ পানির সাথে ফুটিয়ে হালকা গরম করে খেলে শরীরের জন্য অনেক উপকার পাবেন। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক কম, তাদের নিয়মিত দারচিনির রস বা দারচিনির পাউডার খাওয়া উত্তম।
এছাড়া সর্দি-কাশি দূর করতে দারচিনির ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। কারো যদি গলাব্যাথা করে তাহলে দারচিনি খেতে পারেন এতে অনেক উপকার পাবেন। আবার দারচিনি দিয়ে চা খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন রাখতে সাহায্য করে। তবে সতর্ক থাকতে হবে গর্ভবতী মহিলাদের দারচিনি কোন ভাবেই না খাওয়া অনেক ভালো। কারণ, গর্ভবতী অবস্থায় দারচিনি খেলে গর্ভপাতের কারন হতে পারে।
সকালে খালি পেটে দারচিনি খাওয়ার উপকারিতা
সকালে খালি পেটে দারচিনি খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের জেনে রাখা জরুরী। আমরা যারা স্বাস্থ্য সচেতন, যারা শরীরে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তাদের জানা আরও বেশি জরুরী। যারা শারিরীক ভাবে দূর্বল, যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং
শরীরের স্বাভাবিক ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পরিমাণ মতো দারচিনি বা দারচিনির সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়া উত্তম। এতে আপনার শরীরে শক্তি বাড়বে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়তে সাহায্য করবে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দারচিনি খেলে আপনার শরীরের কোন স্থানে জয়েন্টের ব্যাথা থাকলে সেই ব্যাথা কমে যেতে কিংবা ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করবে।
যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা দূর করতে কিংবা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখতে নিয়মিত সকালে খালি পেটে রাতে ভিজিয়ে রাখা দারচিনির পানি খেলে খুবই উপকারী। আপনার শরীরের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রনে রাখতেও সকালে খালি পেটে দারচিনি খাওয়া অনেক উপকারী। তাই নিয়মিত খালি পেটে দারচিনি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
দারুচিনির গুঁড়া বা পাউডারের উপকারিতা
দারুচিনি গুড়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখা ভালো। কেননা, দারচিনির ন্যায় দারচিনি পাউডার খেলেও অনেক ধরনের উপকার পাওয়া যায়। দারচিনির পাউডারে যে উপকার রয়েছে বা কার্যকরী গুনাগুন রয়েছে তা আমরা অনেকেই জানিনা। আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে নিশ্চয় জানতে পারবেন।
দারচিনির মতো দারচিনির গুঁড়া খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। হজমের সমস্যা দূর করতে দারচিনি গুঁড়া খুবই উপকারী। মেয়েদের মাসিকের সমস্যার কারনে যদি কোন ব্যাথা অনুভব সেই ব্যাথা দূর করতে দারচিনির গুঁড়া অনেক কার্যকরী। মাথা ব্যাথা এবং চর্মরোগ সারাতে দারচিনির গুঁড়া অনেক উপকারী।
দারচিনির গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি উপকারিতা
আমরা শুধুমাত্র দারচিনি মসলা হিসেবে চিনে থাকি বা ব্যবহার করে থাকি। আমরা জানি যেকোন তরকারিতে দারচিনি দিলে রান্নার স্বাদ বাড়াতে এবং মজাদার করতে সাহায্য করে থাকে। কিন্ত আমরা অনেকেই জানিনা যে, দারচিনি মসলা ছাড়াও বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। দারচিনির বিভিন্ন গুনাগুন এবং উপকারিতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি উপকারিতা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হইলোঃ
- দারচিনি, গোলমরিচ এবং আদা একসাথে মিহি করে পিষে নিয়ে পানিতে মিশিয়ে আঁচে বসিয়ে রস তৈরী করে খেতে পারলে সর্দি সারাতে সাহায্য করে।
- দারচিনির রস করে পান করতে পারলে পিত্তের জন্য যে বমি হয় তা বন্ধ করতে সাহায্য করবে।
- নিয়মিত দারচিনি খেতে পারলে অজীর্ন, বমি, পেটের ব্যাথা ও গ্যাস কমে যেতে ব্যপক ভূমিকা পালন করে থাকে।
- দারচিনি খেলে মহিলাদের ঋতুস্রাব পরিষ্কার করতে এবং বাচ্চা হওয়ার পর গর্ভাশয় সংকুচিত হতে সাহায্য করে।
- এক চা চামচ দারচিনি এবং তার চেয়ে অল্প বেশি পরিমাণে ছোট হরিতকী একসাথে চূর্ণ করে এক গ্লাস গরম পানিতে মিশিয়ে রাতে পান করতে পারলে সকাল বেলা মল পরিষ্কার করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করবে।
- অল্প পরিমাণে দারচিনি, তার দ্বিগুন পরিমাণে বেলের শাঁস একসাথে চূর্ণ করে তার সাথে গুঁড় এবং টাটকা পাতা টক দইয়ে মিশিয়ে খেতে পারলে শূলযুক্ত আমাশা ঠিক করতে সাহায্য করবে।
- দারচিনি সাদা খয়েরের সমান সমান মাপের চূর্ণ অল্প পরিমাণে নিয়ে মধু মিশিয়ে খেতে পারলে বদহজমের জন্য যদি পাতলা পায়খানা হয় তা বন্ধ হয়ে যাবে।
- অর্ধ চামচ দারচিনির গুঁড়া গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেলে আমাশা সেরে যাবে।
- দারচিনির তেলের দুই তিন ফোটা এক কাপ পানিতে মিশিয়ে খেলে জিভ আটকে যাওয়া, পেটের বিভিন্ন অসুখে, আন্ত্রিক ব্যাথা, হেঁচকি ওঠা, বমি হওয়া ইত্যাদি অসুখে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
- দারচিনির তেল মেয়েদের ঋতুস্রাবে কোন কষ্ট হলে সেই কষ্ট বা কোন অসুবিধা দূর করতে সাহায্য করে।
- দারচিনির তেল মালিশ করলে বাতের ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করবে।
- দারচিনির তেল ব্যাথাযুক্ত দাঁতে লাগালে সেই ব্যাথা দূর হতে সাহায্য করবে।
- যদি কোন কারনে অজ্ঞান হয়ে যায় কিংবা দূর্বলতার জন্য যদি শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় তাহলে দারচিনির তেলের সাথে তিলের তেল মিশিয়ে মালিশ করলে শরীর গরম হতে এবং চেতনা ফিরে পেতে সাহায্য করবে।
- দারচিনির মিহি চূর্ণ চোখ বন্ধ করে চোখের পাতায় লাগালে মূর্ছা ও তন্দ্রা দূর করতে সাহায্য করবে।
- দারচিনির তেল উত্তেজক, সেজন্য দাঁতের ব্যাথা, পেটের ব্যাথা, জিভ আড়ষ্ট হওয়া ইত্যাদি অসুখে বা অসুবিধা দূর করতে সাহায্য করে।
রাতে দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা
রাতে দারুচিনি খাওয়ার অনেক উপকার রয়েছে যা আমাদের সবারই জানা প্রয়োজন। নিয়মিত রাতে ঘুমানোর আগে দারচিনির সাথে পানি মিশিয়ে খেতে পারলে আপনার ত্বক সুস্থ্য, সুন্দর এবং উজ্জলতা বজায় রাখতে ব্যাপক কার্যকরী। নিয়মিত রাতে ঘুমানোর আগে দারচিনি খাওয়া দরকার এতে শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে থাকে,
কারণ দারচিনির শরবতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায়। ত্বকের ছিদ্রতা দূর করে ত্বককে মসৃণ রাখতে রাতে ঘুমানোর আগে দারচিনি খাওয়া উত্তম। সুতরাং বুঝতেই পারছেন রাতে ঘুমানোর আগে দারচিনি খাওয়া আমাদের জন্য কত উপকারী এবং কত কার্যকারিতা পাওয়া যায়। তাই আমাদের নিয়মিত রাতে ঘুমানোর আগে দারচিনি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
দারচিনি খেলে কি ক্ষতি হয় বা দারচিনির অপকারিতা
দারচিনি খেলে কি ক্ষতি হয় বা দারচিনির কোন অপকারিতা রয়েছে কিনা সে বিষয়ে আমাদের জানতে হবে। দারচিনি খেলে যে উপকার হবে সেটা আমরা ইতোমধ্যে বা আগে থেকেই জেনে গেছি। এখন আমাদের এটা জানতে হবে যে, দারচিনি খেলে আমাদের শরীরে কোন ক্ষতি বা অপকার হবে কিনা সেই বিষয়ে জেনে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
অতিরিক্ত কোন কিছুই আমাদের শরীরের জন্য ভালো না, ঠিক তেমনি অতিরিক্ত দারচিনি খেলেও আমাদের শরীরে এর প্রভাব পড়বে। যেমন, অতিরিক্ত দারচিনি খেলে আমাদের পাকস্থলিতে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমাদের লিভারের বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও যাদের শরীরে অস্ত্রপচার করা হয়েছে বা অস্ত্রপচার করাবেন তাদের জন্য দারচিনি অনেক বড় ক্ষতি করতে পারে, তাই তাদের ক্ষেত্রে দারচিনি না খাওয়াই বেশি ভালো হবে।
এমনকি যারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য বিভিন্ন ধরনের মেডিসিন বা ঔষধ সেবন করছেন তাদের ক্ষেত্রে দারচিনি খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো কোন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। দারচিনি বেশি পরিমাণে খেলে উপকারের থেকে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কেননা, দারচিনির তেল বেশি পরিমাণে ব্যবহারের ফলে এটা বিষতুল্য হয়ে ওঠে। তাই অতিরিক্ত দারচিনি সেবন থেকে নিরাপদ থাকা উচিৎ।
লেখকের মন্তব্য এবং শেষ কথা
উপোরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা দারচিনি খাওয়ার নিয়ম, দারচিনি সকালে খালি পেটে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে, দারচিনির গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি উপকারিতা সম্পর্কে, দারচিনির গুঁড়ার উপকারিতা, রাতে ঘুমানোর আগে দারচিনি খাওয়ার উপকারিতা, দারচিনি খেলে কোন ক্ষতি কিংবা কোন অপকারিতা রয়েছে কিনা ইত্যাদি সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম।
রান্নার স্বাদ এবং সুগন্ধ বাড়ানোর জন্য আমরা সাধারণত দারচিনি মসলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে দারচিনি যে বিভিন্ন রোগের মহৌষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে তা জানতে পারলাম। তবে সতর্ক থাকতে হবে যেকোন ভালো জিনিসেরও অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না। নিয়মের বাইরে কোন কিছু খেলে বা ব্যবহার করলে তার উপকারের থেকে ক্ষতির আসংকাই বেশি দেখা যেতে পারে।
সুতরাং যেকোন বিষয়ে নিয়ম জেনে তার সঠিক ব্যবহার করা আমাদের কর্তব্য। আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আজকের এই পোস্টটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। আপনার কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url