পুদিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম-পুদিনা পাতার ১০টি উপকারিতা সম্পর্কে জানুন।
পুদিনা পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম এবং পুদিনা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই অনেক কিছু জানিনা। আধুনিক মতে, পুদিনা বায়ু নাশ করে, জমে থাকা পেটের বায়ু নির্গমনে সাহায্য করে থাকে। পুদিনার চাটনি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি হজম শক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। পুদিনা পাতা খেলে নাকি শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে।
এছাড়াও পুদিনা পাতার চা খেলে কি কি উপকার পাওয়া যাবে, পুদিনা পাতার ১০টি উপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি পুদিনা পাতার বিভিন্ন উপকারিতা বা গুনাগুন সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইলো।
ভূমিকা
পুদিনা পাতা শরীরের দূষিত পদার্থ মলের সাথে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে থাকে। পুদিনা পাতা কাঁচা খেলে কি ধরণের উপকার পাওয়া যাবে তা এখানে জানতে পারবেন। পুদিনা পাতা মধুর সাথে, লবণের সাথে মিশিয়ে খাওয়ার মধ্যে কি ধরণের উপকার নিহিত রয়েছে তা এই পোষ্টের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
পুদিনা পাতার চাটনি, পুদিনা পাতার রস, পুদিনা পাতা এবং তুলসি পাতার রস একত্রে খাওয়ার যে উপকার রয়েছে তা আমরা আজকের এই পোষ্টটি পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিত জানতে পারবো। সুতরাং পুদিনা পাতার সার্বিক গুনাগুন এবং উপকারিতা সম্পর্কে জানতে লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়্রার বিশেষ অনুরোধ রইলো।
পুদিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম ও পদ্ধতি
পুদিনা পাতা খাওয়ার বেশ কিছু নিয়ম-কানুন এবং পদ্ধতি রয়েছে। এই নিয়ম এবং পদ্ধতি জেনে আপনি যদি পুদিনা পাতা খেতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনি এর পরিপূর্ণ গুনাগুন পেয়ে যাবেন। যেকোন জিনিস নিয়ম মেনে খেলে বা নিয়ম জেনে কাজ করলে অবশ্যই সেই বিষয়ের পরিপূর্ণ গুনাগুন পাওয়া সম্ভব। নিচে পুদিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম এবং পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হইলোঃ
পুদিনা পাতার চাটনিঃ পুদিনা পাতার চাটনি খাওয়া বেশ উপকারী। টাটকা পুদিনা পাতায় শুকনো খেজুর, গোলমরিচ, লবণ, হিং, জিরা ও কালো আঙ্গুর পরিমাণ মতো মিশিয়ে নিয়ে একসাথে পিষে নিয়ে চাটনি তৈরী করা যায়। এতে পাতি লেবুর রস মেশালে আরও অনেক ভালো হবে।
এই চাটনি খাওয়ার ফলে আপনার মুখের রুচি আসবে, মুখের বিস্বাদ দূর হয়ে খাওয়ার ইচ্ছা জাগবে, বায়ুজনিত অস্বস্তি দূর হয়ে যেতে সাহায্য করবে, হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে, এমনকি শরীরের নিস্তেজ ভাব দূর করতেও ব্যাপক সাহায্য করে থাকে।
পুদিনা পাতার ক্বাথঃ পুদিনা পাতা, তুলসি পাতা, গোলমরিচ ও আদা একসাথে মিশিয়ে তারপর পিষিয়ে নিয়ে পানিতে সেদ্ধ করে একটা ঘন ক্বাথ বা উপকারী রস তৈরী করা যায়। তৈরীকৃত এই রস খেতে পারলেও বায়ু দূর হবে এবং খুব খিদে পেতে সাহায্য করবে।পুদিনা পাতার টাটকা রসঃ পুদিনা পাতা পিষে নিয়ে বা থেঁতো করে রস বের করে নিতে হবে। এই রস কফ, সর্দি, কপালে সর্দি জমে যাওয়ার পক্ষে খুবই উপকারী।
পুদিনা পাতা আর তুলসি পাতার ক্বাথঃ টাটকা পুদিনা পাতা ও তুলসি পাতা একসাথে পিষে নিয়ে পানিতে মিশিয়ে পাত্র ঢাকা দিয়ে ঘন ঝোল বা ক্বাথ তৈরী করুন। এই ক্বাথ খেলে প্রতিদিন যে জ্বর আসে একটা বিশেষ সময়ে তা সারাতে সাহায্য করবে।
পুদিনা পাতা, সবুজ তুলসি ও কৃষ্ণ তুলসির রসঃ এই তিন রকমের পাতা একসাথে মিশিয়ে থেঁতো করে রস বের করে নিতে হবে। এই রসের সাথে অল্প চিনি মিশিয়ে খাওয়ালে টাইফয়েড রূগীদের জন্য বেশ উপকারী।
পুদিনা পাতার রস ও মধুঃ পুদিনা পাতার টাটকা রস অল্প মধুর সাথে মিশিয়ে প্রতি দুই ঘন্টা অন্তর ১ চা চামচ করে খাওয়ালে ত্রিদোষ জ্বর অর্থাৎ নিউমোনিয়া রোগীর অনেক উপকার হবে এবং জ্বরও তাড়াতাড়ি সেরে যেতে সাহায্য করবে।
পুদিনা পাতার রস ও মধুর আরও প্রয়োগঃ পুদিনা পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ালে তাদের সর্দি, কাশি ভালো করতে সাহায্য করবে।
পুদিনা পাতা ও আদার রসঃ পুদিনা পাতার রস ও আদার রস একসাথে মিশিয়ে তাতে অল্প করে লবণ দিয়ে এই রস খেলে তীব্র পেটের ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করবে।
পুদিনা পাতার ১০টি উপকারিতা
পুদিনা পাতার অনেক গুনাগুন এবং উপকারিতা রয়েছে। এই গুনাগুন এবং উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। পুদিনা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে প্রয়োগ করতে পারলে আপনি নিজেই তার প্রমাণ বুঝতে পারবেন। পুদিনা পাতার নানাবিধ উপকারিতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ১০টি উপকারিতা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হইলোঃ
- পুদিনা পাতার অন্যতম বড় গুন হলো এটি বিষাক্ত জন্তুর বিষ নষ্ট করতে সাহায্য করে।
- পুদিনা পাতা পুড়িয়ে সেই ছাই দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের মাড়ি ব্যাপক শক্ত করতে সাহায্য করে।
- মধুর সাথে পুদিনা পাতা মিশিয়ে খেলে শরীরের জমে থাকা ক্লেদ ঘাম হয়ে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে।
- পুদিনা পাতা কচলে নিয়ে শুকিয়ে দিলে মূর্ছা রোগের জন্য ব্যাপক উপকারী।
- মধু ও লবণের সাথে পুদিনা পাতা বাটা খেলে কৃমি দূর করতে সাহায্য করে।
- কফ, সর্দি, জ্বর ও কুষ্ঠরোগের পক্ষে পুদিনা পাতা খুবই উপকারী।
- সর্দি বা শ্লেষ্মা মল ও প্রস্রাবের সাথে শরীরের বাইরে বেরিয়ে যায় পাহাড়ে পুদিনা পাতা নামক বিশেষ শ্রেণীর পুদিনা পাতা খেলে ।
- পুদিনা পাতা সেদ্ধ করে বেটে মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে পায়ের গোদের জন্য খুবই উপকারী।
- পুদিনার রস ভিনিগারে বেটে কফের জন্য যে ফোলা তাতে লাগালে ফোলা কমে যেতে সাহায্য করবে।
- পুদিনা গুরু, স্বাদু, খাওয়ার রুচি বাড়ায়, খিদে বাড়ায়, বল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, হার্টের জন্য ব্যাপক উপকারী, মনে ও শরীরে সুখের আমেজ আনতে পুদিনা পাতা খুবই উপকারী।
পুদিনা পাতার বৈশিষ্ট ও গুনাগুন
পুদিনা পাতার বেশ কিছু বৈশিষ্ট রয়েছে। পুদিনা পাতা খাওয়ার ফলে বদহজম দূর করেত সাহায্য করে, পেটের অসুখ সারাতে সাহায্য করে, কৃমি ও অরুচি নাশ করতে সাহায্য করে, বমি থামিয়ে দিতেও সাহায্য করে থাকে। বমির সাথে হেঁচকি উঠা ভাব দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
পুদিনা পাতা জন্ডিস রোগের মহা ঔষধ হিসেবে ব্যাপক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রস্রাব ও ঘামের সাহায্যে শরীরের সব গ্লানি বের করে দিতে সাহায্য করে। এমনকি মেয়েদের ঋতু পরিষ্কার করতেও পুদিনা পাতা ব্যাপক উপকার করে থাকে।
পুদিনা পাতা কোন কোন রোগের প্রতিষেধক
হাকিমি বা ইউনানি মতে, পুদিনা পাতা খাওয়ার ফলে শরীরের তাপ বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। শরীরের দূষিত পদার্থ গুলো মলের সাথে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে থাকে। পাকস্থলি, বুকের ও কিডনির যাবতীয় গ্লানি, সমস্যা ও ক্লেদ দূর করতে সাহায্য করে। বমি এবং হেঁচকি ওঠা ভাব দূর করতে সাহায্য করে।বদহজম ও গা বমি ভাব দূর করতে পুদিনা পাতা অব্যর্থ ঔষধ হিসেবে ব্যাপক কার্যকরী ভুমিকা পালন করতে সাহায্য করে।
পেটের দূষিত বায়ু নিঃসারিত করতে ও বায়ুজনিত অস্বস্তি দূর করতে ব্যাপক কাজ করে থাকে। জন্ডিস রোগের প্রতিষেধক হিসেবেও পুদিনা পাতা ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রস্রাব ও ঘামের সাহায্য শরীরের সব গ্লানি বের করে দিতেও সাহায্য করে। এমনকি মেয়েদের ঋতু পরিষ্কার করতেও পুদিনা পাতা ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
পুদিনা পাতার চায়ের গুনাগুন
বেশি করে চা খেলে শরীর খারাপ হয় এটা আমরা অনেকেই জানি। বিশেষত আমাদের দেশের মতো গরম দেশে দেশি চা খাওয়া শরীরের পক্ষে খুব একটা ভালো না। বহুদিন আগে একজন কৃষিবিজ্ঞানী পুদিনা পাতা দিয়ে একরকম চায়ের উদ্ভাবন করেছিলেন। যা খেলে চায়ের তৃষ্ণা মেটে, অথচ শরীরও ঠান্ডা থাকে।
ঠিক চায়ের মতো করেই চায়ের পাতার বদলে পুদিনা পাতা সেই সাথে দুধ, চিনি, গোলমরিচ ও মৌরী দিয়ে এই চা তৈরী করা হয়ে থাকে। এই চা খেতে সুস্বাদু এবং পরিপূর্ণ তৃপ্তি দিয়ে থাকে। শরীরের পক্ষে পুষ্টিকর এবং হিতকর পানীয়। খিদে ও পরিপাক শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশ ভালো এবং সব দিক থেকে অনেক উপকারী।
শেষ কথা ও লেখকের মন্তব্য
উপোরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা পুদিনা পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম, পুদিনা পাতার বৈশিষ্ট ও গুনাগুন সম্পর্কে, পুদিনা পাতার ১০ টি বিশেষ উপকারিতা সম্পর্কে, পুদিনা পাতার চায়ের কার্যকারিতা সম্পর্কে, পুদিনা পাতা কি কি রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকে সে বিষয়ে আমরা সম্যক ধারণা বা বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছি।
যেকোন জিনিসের কার্যকারিতা বা উপকার সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার সাথে সাথে অবশ্যই সেই জিনিসের যে ব্যবহার বিধি বা নিয়ম নীতি রয়েছে সেই বিষয়ে আমাদের জানতে হবে। কেননা, নিয়ম জেনে যেকোন কাজ করা হলে সেই জিনিসের পরিপূর্ণ গুনাগুন এবং কার্যকারিতা পাওয়া সম্ভব। আশা করছি, পোস্টটি পড়ে আপনি অনেক কিছুই জানতে পেরেছেন।
লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ। আজকের এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আপনার যেকোন মতামত অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আমাদের পোস্ট গুলো সবার আগে পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url