গর্ভবতী মহিলাদের বমি হলে কি করণীয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
গর্ভবতী মহিলাদের বমি হলে কি করণীয় কিংবা বমি বমি ভাব নিয়ন্ত্রনের কোন উপায় আছে কিনা, গর্ভবতী হলে প্রথম ১০ দিনের কি কি লক্ষণ গুলো রয়েছে, গর্ভবতী হওয়ার কত দিনে বমি হতে পারে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে আমাদের দেশের অনেক মহিলারা জানেনা। এসব বিষয় সম্পর্কে জানতে আজকের এই লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়লে জানতে পারবেন।
এছাড়াও গর্ভবতী মহিলাদের বমি হলে তাদের কি কি করণীয় রয়েছে, গর্ভবতী মহিলাদের শেষের ৩ মাসের কি কি সতর্কতা রয়েছে বা কি কি সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হবে সেই বিষয় নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে।
ভূমিকা
গর্ভাবস্থায় মহিলাদের অনেক কিছু জানার রয়েছে, অনেক কিছু বুঝার বিষয় রয়েছে। তবে যারা প্রথম বা গর্ভবতী তারা আসলে এই সব বিষয়ে তেমন না জানারই কথা। যাদের একাধিক এমন হয়েছে তারা হয়তো অনেক কিছু অনুধাবন করতে পারে। আবার একটা বিষয় হলো এখনকার মানুষ অনেক স্বাস্থ্য সচেতন, বেশির ভাগ মহিলারাও এখন মোবাইল ব্যাবহার করে থাকেন।
তারা যেকোন বিষয়ে গুগলে বা ইউটিউবে সার্চ করে বিস্তারিত জানতে পারে, এছাড়াও পরিচিতদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে শেয়ার করার মাধ্যমেও জানতে সক্ষম হতে পারে। আমরা আশা করছি আমাদের এই পোস্ট পড়ে এমন অনেক অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন।
গর্ভবতী হলে প্রথম ১০ দিনের যে লক্ষণ গুলো
গর্ভবতী হয়েছে কিনা তা একজন গর্ভবতী মহিলা বিভিন্ন ভাবে অনুভব করতে পারে। তবে প্রথম বার গর্ভবতী হলে অনেক মেয়েরাই তা বুঝতে পারেনা বা অনুভব করতে পারেনা। কারও সাথে কথা বলে বা পরামর্শ করে যখন তার অনুভূতিটা শেয়ার করে বা তার লক্ষণ দেখে বাড়ির বয়স্ক মহিলারা বুঝতে পারে যে সে গর্ভবতী হয়েছে।
তবে পরবর্তী সময়ে সে নিজেই উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়। কিন্ত বর্তমানে আধুনিক যুগে এখন বেশির ভাগ মহিলাই এই বিষয়ে গুগলে কিংবা যেকোন সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারে। আপনিও যদি না জেনে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি পড়ে আপনি নিজেও লক্ষণ গুলো জানতে পারবেন।
আপনার জানা থাকলে আপনিও অন্যদের এই বিষয়ে সতর্ক করে দিতে পারবেন বা লক্ষণ দেখেই বুঝতে পারবেন কেউ গর্ভবতী হয়েছে কিনা। গর্ভবতী হয়েছে কিনা তা প্রথম দশ দিনের যে লক্ষণ গুলো পরিলক্ষিত হয় তা হলোঃ
- স্তন নরম হয়ে যেতে শুরু করবে।
- মেজাজ অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।
- বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে বা বমি চলমান অসুস্থ্যতা দেখা দিতে পারে।
- ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে।
- ওজন বাড়তে কিংবা কমতে পারে।
- ক্লান্তি বোধ দেখা দিতে পারে।
- মাঝে মাঝে মাথা ব্যাথা করতে পারে।
- বুক জ্বালাতন করতেও দেখা দিতে পারে।
- পায়ে খিল ধরতে পারে।
- পিঠের নিচে বা দাঁড়া দিয়ে ব্যাথা করতে পারে।
- কিছু কিছু খাবারের প্রতি রুচি বোধ দেখা দিতে পারে।
- আবার কিছু কিছু খাবারের প্রতি রুচি কমে যেতে পারে বা অপছন্দ হতে দেখা দিতে পারে।
- সুতরাং উপোরোক্ত লক্ষণ গুলো দেখা দিলে নিজের বা অন্য কারো এমন লক্ষণ দেখা দিলে বুঝবেন এটা গর্ভবতীর লক্ষণ।
গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হতে পারে
গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তর আমাদের অনেকেরই অজানা। তবে বর্তমানে সবাই অনেক স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ায় এই বিষয় গুলো আগে থেকেই সবাই জানতে শুরু করে। এই বিষয় গুলি মেয়েদের জানা খুবই জরুরী। এক্ষেত্রে দেখা যায় গ্রামের মানুষ অনেকেই গুগলে সার্চ করে এইসব বিষয় জানতে পারেনা।
তারা ধারনার উপর নির্ভর করেই এই সব বিষয়ে সতর্ক থাকার চেষ্টা করে। তবে একটা বিষয়ে জেনে রাখা ভালো যে সব বিষয়ে ধারণা করলেই যে তা সঠিক হবে বেপারটা এমন না। মানুষ এখন অনেক সচেতন তাই তারা বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সার্চ করে এইসব বিষয় জানতে পারে।
গর্ভবতী মহিলাদের বমি হলে কি করণীয়
গর্ভবতী মহিলাদের বমি হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা, তবে কারও কারও অতিরক্ত বমি হতে দেখা যায় আবার কারো ক্ষেত্রে কম বমি হতে দেখা যায়। বমি হওয়া একেবারে বন্ধ না করতে পারলে অন্তত বমি কমানোর ব্যাবস্থা করতে পারলে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অনেক আরামদায়ক হতে সাহায্য করে। প্রাথমিক ব্যাবস্থা গ্রহনের মাধ্যমে বমি বমি ভাব কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব।
বিশেষ করে ঘরোয়া পরিবেশে নিজেরাই কিছুটা নিয়ম মানতে পারলে বমির ভাব নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব। গর্ভবতী মহিলাদের বমি নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য যেসব তরকারী দিয়ে খাবার খাওয়া সেই সব তরকারীতে তেলের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে এবং মসলা কমায় দিয়ে রান্না করে খাওয়া উচিৎ। নিয়মিত খাবারের মধ্যে ভাত, টোস্ট বিস্কুট, চা, কলা, শুকনো খাবার কিংবা শুকনো ফল খেলে বমি নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব।
আর যে খাবারই খাওয়া হোক না কেন অবশ্যই যেন সেই খাবার প্রোটিন যুক্ত খাবার হয়, কেননা প্রোটিন যুক্ত খাবার খেলে খাবার গুলি পেটে স্বাভাবিক চলাচল করতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের বমি হলে কি করণীয় রয়েছে তা নিম্নে আলোচনা করা হইলোঃ
- সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে শুকনো জাতীয় খাবার খাওয়া উত্তম। এমনকি রাতে ঘুমানোর সময় শুকনো খাবার খাওয়া দরকার। টোস্ট বিস্কুট, মুড়ি এ জাতীয় খাবার খেতে পারেন।
- বমি বমি ভাব দূর করতে কিংবা নিয়ন্ত্রনে রাখতে একসাথে বেশি করে খাবার খাওয়া মোটেই উচিৎ না। প্রয়োজনে একটু পর পর খাবার খাওয়া যেতে পারে।
- কলা খাওয়া যেতে পারে, আবার চর্বিহীন মাংস খাওয়া যেতে পারে বমি নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য।
- নিয়মিত ঘন ঘন পানি পান করা উচিৎ, তবে মনে রাখতে হবে খাবার খাওয়ার সময় পানি কম খেতে হবে।
- একদম বসে বা শুয়ে না থেকে হাঁটা চলা করা বেশ ভালো, তবে টুকটাক কাজ করলে আরও বেশি ভালো হয়। তাহলে বমি ভাব কম হতে সাহায্য করবে।
- বমি বমি ভাব দূর করতে কিংবা নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে আদা দিয়ে চা খাওয়া যেতে পারে, এছাড়া লেবু খেলে বা লেবুর পাতার গন্ধ নিতে পারলেও এর উপকার পাবেন।
- গর্ভবতী মহিলাদের বমি ভাব দূর করতে কিংবা নিয়ন্ত্রনে রাখতে সুপারি চাবিয়ে খেতে পারেন অথবা পান সুপারী খেতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় শেষের ৩ মাসের সাবধানতা
গর্ভবস্থায় মহিলাদের শেষের ৩ মাসে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে হবে, অনেক বেশি সাবধান থাকতে হবে, কেননা শেষের ৩ মাসে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়ে ঝুঁকি বাড়তে বাড়ে তা হলো রক্তচাপ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বাড়তে বাড়ে। এক্ষেত্রে লবণ কম খেতে হবে, লবণ জাতীয় খাবার খুব বেশি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, খুব বেশি লবণ বা লবণ জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ার ফলে গর্ভবতীদের পায়ে পানি জমতে পারে।
এছাড়া ঝালের তরকারী, তেল বেশি দেয়া তরকারী, ঝাঁঝালো ইত্যাদি জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। গর্ভবতীদের খুব বেশি শর্করা রয়েছে এমন খাবার খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে। কেননা, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের সমস্যা বাড়তে পারে। সুতরাং গর্ভাবস্থায় শেষের ৩ মাসে মহিলাদের খুব বেশি মিষ্টি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার এমনকি খুব বেশি শর্করা জাতীয় খাবার পরিহার করে চলাই উত্তম।
গর্ভবতী মহিলাদের এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে যে, একেক জনের শারিরীক অবস্থা একেক রকম, কারও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি আবার কারও অনেক কম। তাই স্বাস্থ্য সচেতনার লক্ষ্যে গর্ভাবস্থায় শেষের ৩ মাসে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে, নিয়মিত তাদের সাথে যোগাযোগ রেখে সার্বিক অবস্থায় সচেতন থাকাই বেশি ভালো হবে।
শেষ কথা ও লেখকের মন্তব্য
উপোরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে গর্ভাবস্থায় মহিলাদের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে অবগত হতে পারলাম। আমরা আজকের এই পোস্ট পড়ার মাধ্যমে গর্ভবতী মহিলাদের প্রথম ১০ দিনের কি কি লক্ষণ রয়েছে বা কিভাবে বুঝা যাবে সে বিষয়ে জানতে পারলাম, আরও জানতে পারলাম গর্ভবতী হওয়ার কত দিনে বমি হতে পারে, বমি বমি ভাব কমানোর বা নিয়ন্ত্রনের উপায় কি,
গর্ভবতী হওয়ার শেষের ৩ মাসে করণীয় বা সাবধানতা কিভাবে অবলম্বন করতে হবে তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলাম। এক্ষেত্রে লেখকের মন্তব্য বা উত্তম পরামর্শ হলো খাবার-দাবার, চলাফেরা, ঘুম প্রভূতি গর্ভবতী মহিলাদের নিয়ম মাফিক করার পাশাপাশি ভালো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সে মাফিক চলাই উত্তম।
আজকের লেখাটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। লেখাটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। পোস্ট সম্পর্কে যেকোন মতামত থাকলে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। আমাদের ওয়েবসাইট ফলো দিয়ে রাখবেন, এমন আরও পোস্ট সবার আগে পেয়ে যাবেন, ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url