দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী থেকে মুক্তির দোয়া ও উপায় সম্পর্কে জেনে নিন।

দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী থেকে মুক্তির দোয়া ও উপায় সম্পর্কে আজকের মূল আলোচনা। আমরা আশরাফুল মাখলুকাত, সৃষ্টির সেরা জাতী হিসেবে আল্লাহ তায়ালা আমাদের বানাইছেন। বিপদ ও পেরেশান আমাদের সকলের মাঝেই বিদ্যমান রয়েছে। এই বিপদ ও পেরেশান থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি সে বিষয়ে আমাদের জানতে হবে।
দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী থেকে মুক্তির দোয়া ও উপায়
দুশ্চিন্তা-বিপদের সময় আমরা কি কাজ করতে পারি বা কোন দোয়া ও উপায় কি রয়েছে, ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সমূহ কি কি উপায় রয়েছে, অতিরিক্ত পেরেশানী করার জন্য বা মাইগ্রেশনের জন্য আমাদের যে মাথা ব্যাথা হয়, এই মাথা ব্যাথা দূর করার দোয়া ও উপায় সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার। এমন সব বিষয়াদি সম্পর্কে জানতে হলে লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।

ভূমিকা

আল্লাহ পাক আমাদের এই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন শুধুমাত্র তার ইবাদতের জন্য, আর এই দুনিয়ার জীবদ্দশায় আল্লাহ পাক আমাদের বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা করে থাকেন। আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ পরীক্ষা করার জন্য আল্লাহ পাক মানুষকে বিভিন্ন রোগ ব্যাধি দিয়ে থাকেন। সৃষ্টির সেরা খ্যাতি ও খোদার নৈকট্য লাভের জন্য মূলত আমাদের মধ্যে,


দুইটি বিষয় বিদ্যমান থাকা খুবই জরুরী, একটি হলো জ্ঞান এবং অপরটি হলো ইচ্ছা শক্তি। কাম, ক্রোধ, লোভ-লালসা বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন সমস্যা আমাদের সকলের মাঝেই কমবেশি বিদ্যমান রয়েছে। কিন্ত আমাদের তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে এইসব কিছু নিয়ন্ত্রন করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য অপরিহার্য্য।

আল্লাহর বিধি-নিষেধ মান্য করার জন্য আল্লাহর হুকুম মানার পাশাপাশি আমাদের বিভিন্ন ছোট ছোট মাসনূন দোয়াগুলি পাঠ করা দরকার। তাহলে এর দ্বারা আমাদের আন্মশুদ্ধির মাধ্যমে আমাদের অন্তর কামিয়াবী অর্জন করতে এবং অন্তর পবিত্র করতে সাহায্য করবে।

বিপদ থেকে উদ্ধার বা মুক্তি পাওয়ার দোয়া ও উপায়

আল্লাহ্‌ পাক বান্দাদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিপদ আপদ দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন। বিপদ যত বড় এবং যত কঠিনই আসুক না কেন আমাদের আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে এবং একমাত্র আল্লাহ তায়ালার উপরেই তায়াক্কুল করতে হবে। বিপদ আপদে আমাদেরকে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে এবং আমাদেরকে বেশি বেশি আমলের দ্বারা আমাদের ঈমানকে মজবুত করতে হবে।

 
যার ঈমান ও আমল যত মজবুত হবে তার দুনিয়া ও আখিরাত সুন্দর এবং কল্যাণময় হবে। পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ্‌ পাক জানিয়েছেন, নবী হযরত ইউনূস (আঃ) যখন মাছের পেটের মধ্যে ভয়ংকর বিপদে পড়ে আল্লাহর কাছে স্বকাতরে কাকুতি-মিনতি করে প্রার্থনা করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ " ইউনূস (আঃ) এর এই দোয়া পড়ে যেকো্ন মুসলমান যেকোন বিপদে বা যেকোন বিষয়ে দোয়া করলে সেই দোয়া আল্লাহ্‌ তায়ালা কবুল করবেন এবং তার প্রার্থনা পূরণ করবেন।

দোয়াটি হলোঃ লা--ইলাহা ইল্লা আংতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনায যলিমী-ন। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৮৭), তিরমিযী হাদীস।
যার অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই, তুমি পবিত্র, মহান; আমি তো সীমা লংঘনকারী যালীমদের অন্তর্ভুক্ত।

এই দোয়াটি বিপদ রক্ষার দোয়া ও দোয়ায়ে ইউনূস নামেও পরিচিত। আগেকার মুরুব্বিদের যেকোন বিপদে এই দোয়া পড়তে বেশি দেখা যেত বা শোনা যেত। এখনো যেকোন বিপদে বা মুসিবতে পড়ে কেউ যদি দোয়া ইউনূস পাঠ করে তাহলে আল্লাহ পাক তাকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন এবং রক্ষা করবেন। এমনকি আমরা মোনাজাতের মধ্যে এই দোয়া পড়ে দোয়া করতে পারি। আল্লাহ পাক আমাদের বেশি বেশি দোয়া ও আমল করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

কেউ মারা গেলে বা বিপদে-কষ্টে নিমজ্জিত হলে যে দোয়া পড়তে হয়

মানুষ মরণশীল,প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যু স্বাদ গ্রহন করবে। মৃত্যুর পর সকলের ঈমান এবং আমলের পরিপ্রেক্ষিতে ফায়সালা করা হবে। আর দুনিয়াতে আল্লাহ্‌ পাক আমাদের পাঠিয়েছেন একমাত্র তার ইবাদত করার জন্য। কেননা দুনিয়ার জিন্দেগীর হিসাব নেওয়া হবে পরকালে। দুনিয়াতে থাকতে আল্লাহ পাক আমাদের বিপদ-আপদ, বাল-মুসিবত, অসুখ-বিসুখ দিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে পরীক্ষা করবেন। 

আর এইসব পরিস্থিতিতে আমাদের ধৈর্য হারা হলে চলবেনা। আমরা আমাদের ঈমান ও আমলের দ্বারা সেইসব বিপদে-আপদে, বালা-মুসিবতে সবুর করতে হবে, তবেই এর দ্বারা আমাদের উত্তম বদলা দান করবেন। কেউ মারা গেলে বা কেউ কোন বিপদে-কষ্টে নিমজ্জিত হয়ে যায়, নিপতিত হয়ে যায় তবে তার জন্য আমরা যে দোয়া করতে পারি বা যে দোয়া করে থাকি তা নিম্নে আলোচনা করা হইলোঃ

উচ্চারণঃ ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি'উন। আল্লাহুম্মা আজিরনী ফী মুসিবাতী ওয়া আখলিফ লী খইরাম মিনহা। (মুসলিম)
যার অর্থঃ নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় তাঁর কাছেই আমরা ফিরে যাবো। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে এই বিপদ মুসিবতের পুরস্কার প্রদান করুন এবং এর পরিবর্তে আমাকে এর চেয়ে উত্তম কিছু প্রদান করুন।

উম্মুল মু'মিনীন উম্মে সালামাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, যদি কোন মুসলিম বিপদগ্রস্ত হয়ে এই কথাগুলি বলে তাহলে আল্লাহ পাক তাকে অবশ্যই উক্ত ক্ষতির পরিবর্তে উত্তম বিষয় দান করে ক্ষতিপূরণ করে দিবেন।

দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী থেকে মুক্তির দোয়া ও উপায়

দুনিয়ার জিন্দেগীতে আমরা সবাই কোন না কোন বিপদে বা পেরেশানীতে বা মুসিবতে নিমজ্জিত রয়েছি। হয়তো কারো বিপদ জটিল, কারো পেরেশানী বেশি আবার কারো পেরেশানী কম, কারো কষ্ট বেশি আবার কারও কষ্ট তুলনামূলক কম। সুতরাং এটা আমাদের সবাইকে মানতে হবে যে, দুনিয়ার যামানায় আমাদের প্রত্যেক্যেই কোন না কোন বিপদ বা পেরেশানী মোকাবিলা করতেই হবে। 


এটাই দুনিয়ার নিয়ম-নীতি, এটাই আল্লাহ পাকের বান্দার প্রতি পরীক্ষা। আম্মাজান হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর পরিবারের সবাইকে একত্রিত করে বলতেন; "তোমাদের কেউ কখনো কোন দুশ্চিন্তা বা বিপদের মধ্যে নিপতিত হলে এই দোয়া পড়বেঃ

উচ্চারণঃ আল্লা-হু, আল্লা-হু রাব্বী, লা-উশরিকু বিহী শাই-আন। আল্লা-হু, আল্লা-হু রাব্বী, লা-উশরিকু বিহী শাই-আন। (আবু দাঊদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)
যার অর্থঃ " আল্লাহ্‌, আল্লাহ্‌, আমার রব, তার সাথে কাউকে শরীক করিনা, আল্লাহ্‌, আল্লাহ্‌, আমার রব, তার সাথে কাউকে শরীক করিনা।

কেউ কোন বিপদে পতিত হলে বা বিপদের আশঙ্কা দেখা দিলে অধিক পরিমাণে নিম্নের দোয়াটি পড়তে হবে। নিম্নের দোয়াটি প্রতিদিন ১০০ বার করে পড়লে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বিশেষ কোন প্রয়োজন হলে তিন দিনে ১২ হাজার বার পড়তে হবে। (মাকবুল দোয়া-পৃ ১৬৪)

দোয়াটি হলোঃ হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি'মাল ওয়াকীল, আলাল্লাহি তাওয়াক্কালনা।
যার অর্থঃ আল্লাহ্‌ পাক আমাদের জন্য যথেষ্ঠ, আর উত্তম কর্মসম্পাদনকারী, আল্লাহর প্রতি আমরা পূর্ণ ভরসা করলাম। (তিরমিযী, হাদীস-২৪৩১, ২৩৫৫)।

দুশ্চিন্তা দূর করার একটা বিশেষ আমলঃ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সাঃ) নামাজ শেষে ডান হাত আপন মাথার উপর বুলাইতেন আর এই দোয়া পড়িতেন- 
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইযহাব আ'ন্নীল গাম্মা ওয়াল হুযনা।
যার অর্থঃ আয় আল্লাহ! আপনি আমার সর্বপ্রকার দুশ্চিন্তা ও পেরাশানীকে দূর করিয়া দিন।
চিন্তামুক্ত বা চিন্তা দূরীভূত হওয়ার দোয়াঃ 

উচ্চারণ- "ইয়া-হায়্যু ইয়া ক্বাইয়ুম বিরাহ্‌ মাতিকা আস্তাগি-স।"
যার অর্থ- হে চিরঞ্জীব! হে সবার তত্ত্বাবধায়ক! তোমার করুণা প্রার্থনা করছি। বুজুর্গানে কেরাম বলেছেন, উপোরোক্ত দোয়াটি মারাত্মক পেরেশানীতে পতিত ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা একই বৈঠকে ৫০০ বার করে পড়তে পারলে সকল পেরেশানী দূর হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।

ঋণ মুক্তি ও ঋণ পরিশোধ করার দোয়া

ঋণ মুক্তির জন্য কতিপয় দোয়াঃ হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেনঃ " ঋণের কারণে মুমিনের আত্মা জান্নাতে প্রবেশের পথে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে তার ঋণ আদায় না হওয়া পর্যন্ত।" (তিরমিযী)

হযরত আলী (রাঃ) এর নিকট এক ব্যক্তি ঋণ মুক্তির জন্য সাহায্য প্রার্থনা করলে তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কিছু বাক্য শিখিয়ে দিয়েছেন, আমি তোমাকে তা শিখিয়ে দিচ্ছি। তোমার যদি পাহাড় পরিমাণ ঋণ থাকে তাহলেও আল্লাহ তোমার পক্ষ থেকে তা আদায় করে দিবেন এবং তোমাকে ঋণমুক্ত করবেন। তুমি এই দোয়া পড়িবে-

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাকফিনী বিহালা-লিকা 'আন হারা-মিকা ওয়া আ'গনিনী বিফাদলিকা 'আ-ম্মান সিওয়াকা।
যার অর্থঃ " হে আল্লাহ্‌, আপনি আমার হালাল প্রদান করে আমাকে হারাম থেকে রক্ষা করুন এবং আপনার দয়া ও বরকত প্রদান করে আমাকে আপনি ছাড়া অন্য সকলের অনুগ্রহ থেকে বিমুক্ত করে দিন।" (তিরমিযী শরীফ, মুসনাদের আহমাদ)

ঋণ পরিশোধ করার সময় যে দোয়া পড়তে হয়
ঋণ মুক্তির দোয়ার পাশাপাশি ঋণ পরিশোধ করারও দোয়া এবং আমল রয়েছে। ঋণ পরিশোধ করার সময় পরিশোধকারীর জন্য এরুপ দোয়া পড়তে হয়--

উচ্চারণঃ আওফাইতানী আওফাল্লাহু বিকা ওয়াফাল্লাহু বিকা আওফাকাল্লাহু।
যার অর্থঃ তুমি আমার ঋণ পরিশোধ করে দিয়েছো, আল্লাহ তোমাকে এর প্রতিদান দান করূন। অথবা, আল্লাহ তোমার সাথে স্বীয় প্রতিশ্রুতি রক্ষা করুন। (হিসনে হাসীন)

ক্লান্তি দূর করার উপায় ও ঘুমানোর আগে আমল

সারাদিন কাজকর্ম, খাটা-খাটনি করে, কিংবা বিভিন্ন পেরেশানী, ঝামেলা থেকে পরিত্রান হয়ে যখন রাতে ঘুমাতে যাওয়া হয় শরীরটা অনেক ক্লান্ত -শ্রান্ত হয়ে পড়ে। এই আমলগুলি জানা থাকলে বা এই আমলগুলি জানা থাকলে আপনার শরীরের ক্লান্তি দূর করে একটা প্রশান্তির ঘুম আনয়ন করতে সাহায্য করবে। সুতরাং ক্লান্তি দূর করতে এবং রাতে ঘুমানোর আগে এই কতিপয় আমল ও কৌশল অবলম্বন করা আমাদের জরুরী। 


পরিশ্রম কম বেশি সকলেই করে কিন্ত এই আমলগুলি না জানা থাকলে বা এই আমলগুলি না করলে ক্লান্ত শরীর নিয়ে আর কিবা ঘুম হতে পারে। বরং তারা সারারাত এসপার ওসপার করতে থাকে, কোন আরাম পায়না, শান্তির ঘুমও চোখে আসেনা। ক্লান্তি দূর করার আমল ও রাতে ঘুমানোর কতিপয় আমল সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হইলোঃ

হযরত ফাতিমা (রাঃ) সারাদিন কাজ-কর্মের কারণে ক্লান্তির অভিযোগ করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, "ঘুমানোর সময় ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়বে তাহলে তোমার সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে এবং এটা খাদেম অপেক্ষা অনেক উত্তম। (মুসলিম-২৭২৮)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একদা হযরত আলী (রাঃ) কে ঘুমানোর পুর্বে কতিপয় আমল করার উপদেশ দিয়েছেন।
  • চার বার সূরা ফাতিহা পড়ে ঘুমালে ৪ হাজার দিনার সদকা করার সওয়াব আমলনামায় লেখা হবে।
  • তিন বার সূরা এখলাস পড়ে ঘুমালে এক খতম কুরআন তেলাওয়াতের সওয়াব আমলনামায় লেখা হবে।
  • তিন বার দরূদ শরীফ পড়ে ঘুমালে জান্নাতের মূল্য আদায় হয়ে যাবে।
  • দশ বার আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ে ঘুমালে উভয়ের মধ্যে বিবাদ মিটানোর সওয়াব আমলনামায় লেখা হবে।
  • চার বার কালিমা তামজীদ পড়ে ঘুমালে একটা হজ্বের হওয়াব পাওয়া যাবে।

রোগী দেখতে গিয়ে যে দোয়া পড়তে হয়

রোগী দেখতে যাওয়ার অনেক ফজিলত রয়েছে। এক মুসলমান ভাই অপর মুসলমানের ভাইয়ের উপর কতিপয় যেসব হক রয়েছে তার মধ্যে এটাও রয়েছে যে, কেউ অসুস্থ্য হলে তাকে দেখতে যাওয়া। পেরেশানী করলে তার স্বাস্থ্যের যেসব ক্ষতিসাধন হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম প্রভাব ফেলে তাকে অসুস্থ্য করে ফেলে। 

বিপদে পড়লে, বালা মুসিবতে পড়লে, পেরেশানীতে পড়লে, অভাবে পরলে কিংবা অসুখ-বিসুখে পড়লে বুঝা যায় তার প্রভাব কতটা শরীরের উপর বার্তায় যারা এই পরিস্থিতিতে পরছে কেবল তারাই উপলব্ধি করতে পারবে। রোগী দেখতে যাওয়ার অন্যতম ফজিলত হলোঃ 

কেউ যদি কোন রোগীকে সকালে দেখতে যায় তাহলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে। আবার কেউ যদি সন্ধায় কোন রোগীকে দেখতে যায় তাহলে সকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে। (ইবনে মাজাহ-১৪৪২, মুসনাদে আহমাদ-৬১৪, যাদুল মাআদ-১/৪৭৮)

উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বলেছেন, যখন তুমি কোন অসুস্থ ব্যক্তির নিকট যাও তখন তার নিকট দোওয়ার জন্য প্রার্থনা করো। কেননা অসুস্থ ব্যক্তির দোয়া ফেরেশতাদের দোয়ার সমতুল্য। (সুনান ইবনে মাজাহ)

কেউ যদি রোগী দেখতে যায় তাহলে তার নিকট তার হায়াত সম্পর্কে নিশ্চিত করবে এবং তারা নিকট ভালো কথা আলোচনা করবে, দুনিয়াবী কোন বিষয়ে যেন আলোচনা না করা হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা সে সময় ফেরেশতারা উপস্থিত লোকদের কথার উপর আমীন আমীন বলতে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমুর্ষু বা অসুস্থ ব্যক্তিকে তার হায়াত সম্পর্কে এভাবে নিশ্চিত করতেনঃ 

উচ্চারণ- লাবা-সা,ত্বাহূরুন ইংশা আল্লা-হ্‌।
যার অর্থঃ ভয়ের কোন কারণ নেই, ইনশাআল্লাহ আপনি দ্রুত সুস্থ্য হয়ে যাবেন। (বুখারী শরীফ-৩৬১৬, মুসলিম শরীফ-৯১৮, তিরমিযী শরীফ-৯৭৭)। আল্লাহ পাক আমাদের ঈমান এবং আমলের সাথে থাকার তৌফিক দান করুন, আমিন।

শেষ কথা ও লেখকের মন্তব্য

আমরা দুনিয়াতে যতদিন বেঁচে থাকবো, আল্লাহ পাক আমাদের যতদিন হায়াতে বাঁচিয়ে রাখবেন ততোদিন আমরা ছোট বড় কোন না কোন বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত, অসুখ-বিসুখ, দুঃখ-কষ্ট, চিন্তা-পেরেশানী আসবেই। আল্লাহ পাক এগুলোর মাধ্যমে বান্দাদের ঈমান, আমলের এবং ধৈর্যের পরীক্ষা করে থাকেন। এই সমস্যা গুলোর সাথে আমরা প্রায় সকলেই কোন না কোনভাবে জরিত রয়েছি। দুনিয়া মানেই জ্বীন এবং ইনসান অর্থাৎ মানব জাতীর জন্য পরীক্ষাগার। 

আমাদের আসল সুখ-শান্তি তো মৃত্যুর পর, আখিরাতই আমাদের আসল ঠিকানা। দুনিয়াতে যেমন সুখ-শান্তি রয়েছে, আবার সময়ের ব্যবধানে এগুলো পরিবর্তনের সুযোগ আছে। কিন্ত আখিরাত আমাদের জন্য এমন জায়গা যেখানে যেকোন একটা সিদ্ধান্ত বার্তাবে, অর্থাৎ হয় শান্তি আর না হয় শাস্তি, হয় জান্নাতি আর না হয় জাহান্নামী। উপোরোক্ত বিষয়াদী পড়ে নিশ্চয় আমরা জানতে পারলাম বিপদ-আপদ, চিন্তা-পেরেশানী, ঋণ মুক্তির দোয়া, অসুস্থ্য ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার পর কতিপয় দোয়া ইত্যাদি দোয়া এবং আমল সম্পর্কে। 

আমরা এই দোয়াগুলি সময় এবং সঠিকভাবে আদায় করার চেষ্টা করবো, তাহলেই আল্লাহ পাক আমাদের কতিপয় সমস্যা, বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত, চিন্তা-পেরেশানী প্রভূতি থেকে নিরাপদ এবং হেফাজতে রাখবেন। লেখাটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে, আপনার পরিবারের সাথে শেয়ার করবেন। আর যদি কোন মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url