পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা ও পেঁপে খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। কাঁচা পেঁপেঁর তরকারির যেমন কদর রয়েছে ঠিক তেমনি পাকা পেঁপেঁ ফল হিসেবে দারূণ উপকারী। বাঙ্গালী বাড়িতে কাচা পেপের ব্যাপক কদর রয়েছে। লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়লে পেপের বিভিন্ন গুনাগুন সম্পর্কে জানতে পারবেন।
এছাড়াও কাচা পেঁপে খাওয়ার নিয়ম এবং পেঁপে কিসের সাথে মিশে খেলে কি উপকার মিলবে সে বিষয়ে অনেক ধারণা পাবেন। এমনকি কাচা পেঁপের আঠার নানান রকম গুনাগুন সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবেন। তাই সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ করা হইলো।
ভূমিকাঃ একটা সময়ে বাঙ্গালীর পেট রোগা বলে একটা বদনাম ছিল। এখন হয়তো স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে ওঠার জন্য সেটা অনেকটা কমেছে। কিন্ত পেটের অসুখে কাচকলা এবং কাচা পেপের ঝোল এখনো বিদ্যমান। ভোজ বাড়িতে কাচা পেপে প্লাস্টিকের মতো স্বচ্ছ ও পাতলা করে কেটে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে রুচিকর কাচা পেপের চাটনি তৈরী করা হয়ে থাকে।
এছাড়া পেঁপেঁ কুরুনি দিয়ে কুরে নিয়ে ঘিয়ে ভেজে সেদ্ধ করে চিনি, এলাচের গুড়া ও ক্ষীর দিয়ে তৈরী করা হয় পেপের হালুয়া। এমনকি কাচা পেপের পাতারও রয়েছে অনেক উপকারিতা। পেপের আঠা বা দুধ দিয়ে মাংস রান্না করলে মাংস তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয়ে যায়। শুধু যে মাংস তাড়াতাড়ি সেদ্ধ করে তা-ই নয়, মাংস হজমও হয় তাড়াতাড়ি।
কাঁচা পেঁপে খাওয়ার সঠিক সময়
আমরা সবাই জানি যে, কাচা পেপে খাওয়ার অনেক উপকার রয়েছে। তবে সঠিক নিয়ম এবং সঠিক সময়ে খেতে পারলে সঠিক উপকার পাওয়া যাবে।
- প্রতিদিন দুপুরে ভাত খাওয়ার পর এবং রাতে ভাত বা রুটি খাওয়ার পর এক টুকরো কাচা পেপে ভালো করে চিবিয়ে খেলে এবং তারপরে এক গ্লাস পানি খেলে সকালে পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে। অম্বল ও বদহজমের কষ্ট দূর করতেও সাহায্য করে।
- প্রতিদিন নিয়মিত অল্প পানির সাথে কাচা পেপের দুধ বা আঠা ১০ ফোটা করে মিশিয়ে খেতে পারলে দাদ ও চর্মরোগ সারে এবং কৃমি নাশ করতে সাহায্য করে।
- প্রতিদিন তিনবার করে ২০/২৫ ফোটা কাচা পেপের আঠা ২ চা চামচ চিনি মিশিয়ে খেতে পারলে পিলের আয়তন ক্রমশ কমাতে সাহায্য করবে।
- প্রতিদিন সকালে মলত্যাগ করার পর কাচা পেপে সুচ দিয়ে বিধে ১০/১৫ ফোটা তার রস সংগ্রহ করে তাতে সামান্য চিনি মিশিয়ে খেতে পারলে হ্রদরোগ বা হার্টের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।
- সকালে খালি পেটে কাচা পেপে খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে গ্যাস্টিকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।
- পিলে ও লিভার বেড়ে গেলে, তার সাথে জ্বর ও দূর্বলতা দেখা দিলে দিনে ও রাতে খাওয়ার পর নিয়মিত ৫/১০ ফোটা করে পেপের রস খেতে পারলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
- কাচা পেপে দিয়ে তৈরীকৃত আচার প্রতিদিন তিন চার টুকরো করে খেতে পারলে পিলের অসুখ সারাতে সাহায্য করবে।
কাঁচা পেঁপেঁর উপকারিতা
- ঔষধ হিসেবে কাঁচা পেঁপেঁর গুণ পাকা পেঁপেঁর চেয়ে অনেক বেশি।
- কাঁচা পেঁপেঁর আঠা লাগালে চর্মরোগ ভালো করতে সাহায্য করে (যদিও প্রথমে একটু জ্বালা করবে)।
- কাঁচা পেঁপেঁর আঠা বা দুধের একটি বড় গুণ হলো এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, বেদনানাশক, কুষ্ঠরোগ নাশক ও কৃমি নাশ করতে সাহায্য করে।
- কাচা পেপের আঠা পুরোনো অজীর্ন রোগে, পেটের অসুখ (অতিসার), পুরনো পেটের অসুখ কোষ্ঠবদ্ধতা (মল না হওয়া) প্রভূতি রোগের শেফা হিসেবে দারূণ কাজ করে।
- কাঁচা পেঁপেঁর তরকারী অর্শ ও পিলের আরাম দেয় এবং লিভার (যকৃত) বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে।
- কাঁচা পেঁপেঁ বা পেঁপেঁর রস খেলে অরুচি, অনিদ্রা, মাথাব্যথা ইত্যাদি অজীর্ণতা সম্পর্কিত সব অসুখেরই উপশম হয়।
- শিশুদের চেয়ে বড়দের অজীর্ণতায় কাচা পেপে বেশি উপকারী।
- কাঁচা পেঁপেঁর বীজ কৃমিনাশক।
- এই বীজ খেলে মেয়েদের ঋতু নিয়মিত হবে এবং বেশি পরিমাণে খেতে পারলে গর্ভপাত হবে।
- কঁচা পেঁপেঁর আঠায় বা দুধে এমন দু-তিনটা প্রাকৃতিক লবন আছে যার জন্যে অজীর্ন, অর্শ, প্লীহা ও যকৃতের (লিভারের) সব রকম অসুখ দূর করতে সাহায্য করবে।
- যেসব মায়েদের সদ্য বাচ্চা হয়েছে কাঁচা পেঁপেঁর তরকারী নিয়মিত খেলে তাদের স্তনের দুধ বাড়াতে সাহায্য করবে।
পেঁপেঁ খাওয়ার উপকারিতা
পেঁপেঁ খাওয়ার মধ্যে অপকারের চেয়ে উপকারই বেশি পাওয়া যায়। পাকা পেঁপেঁ যেমন ফল হিসেবে খুবিই প্রিয় এবং উপকারী, তেমনই কাঁচা পেঁপেঁ দিয়ে রান্না করা হয় হরেক রকমের খাবার। শুক্তো ডালনা, ছেঁচকি, ঘন্ট, ঝোল এসবতো আছেই। এছাড়া আম-আদা দিয়ে কাঁচা পেঁপেঁর চাটনী বাঙ্গালী-রসনার অতিপ্রিয়। দুধে সেদ্ধ করে চিনি দিয়ে পায়েস তৈরী করা হয়, টক দই মিশিয়ে তৈরী করা হয় রায়তা, বেসন মিশিয়ে গোলকের আকারে তৈরী করে তেলে ভেজে তৈরী করা হয় কোফতা। এভাবে নিরীহ-আটপৌরে , সস্তা, বারো মাস সুলভ তরকারী কাঁচা পেঁপেঁ রসনায় ওয়ে উঠে অপরূপ।
- পেঁপেঁ শুকিয়ে গুড়ো করে অল্প লবন মিশিয়ে খেতে পারলে দূরারোগ্য পিলের অসুখ সারাতে সাহায্য করে। এই ঔষধ পুরানো পেটের অসুখ সারাতেও অনেক উপকারী।
- পেঁপেঁর তরকারী নিয়মিত খেলে যারা পেটের পীড়া বা উদররোগে ভুগছেন এবং যারা হ্রদরোগে ভুগছেন তাদের জন্য খুবই উপকারী।
- আধ চা চামচ পেঁপেঁর দুধ চিনি দিয়ে মিশিয়ে খেতে পারলে অজীর্ণতা সারে।
- পেঁপেঁর পাতার উপকারিতা
- পেঁপেঁর পাতা খেলে বুক ধড়ফড়ানো কমে যাবে এবং নাড়ির গতি স্বাভাবিক করতে সাহায্য করবে।
- পেঁপেঁর পাতা হার্ট সবল রাখতে সাহায্য করে এবং জ্বর নাশ করতেও সাহায্য করে।
- ঘাম দিয়ে শরীরের গ্লানি বেড়িয়ে যায় এবং মূত্রের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে শরীর সুস্থ্য হয়।
- পেঁপেঁর পাতা সেদ্ধ করে চায়ের মতো তৈরী করে খাওয়ালে হ্রদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
- পেঁপেঁ পাতার রস করে খেতে পারলে মানসিক অস্থিরতা ও ঘাবড়ে যাওয়া কমে যাবে।
- জ্বরের জন্য যদি হার্টের দূর্বলতা দেখা দেয় এবং নাড়ির গতি বৃদ্ধি পায় তাহলে এই রস খেলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে এবং নাড়ির গতি শান্ত ও স্বাভাবিক হতে সাহায্য করবে।
- ফুটন্ত পানিতে অল্প মধু ও পেঁপেঁর দুধ মিশিয়ে ২ চা চামচ পরিমাণে খাওয়ালে তার দু ঘন্টা পরে যদি ক্যাস্টর অয়েল অর্থাৎ এরগু বা রেড়ির তেলের জোলাপ খাওয়ানো যায় তাহলে পেট থেকে গোল কৃমি বেরিয়ে যাবে।
পেঁপেঁ খাওয়ার অপকারিতা
কাঁচা পেঁপেঁ কিংবা পাকা পেঁপেঁ খাওয়ার মধ্যে তেমন কোন অপকারিতা নাই বা তেমন কোন অসুবিধা নাই বললেই চলে। তবে গর্ভবতী মহিলাদের এবং যাদের মাসিক বেশি হয় তাদের জন্য পেঁপেঁ না খাওয়াই উত্তম। কারণ, পেঁপেঁ রক্ত ও ভ্রুণ নিঃসারক। বিশেষ করে আধা পাকা পেঁপেঁ খেলে গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকর। এই অবস্থায় অবশ্যই আপনাকে মা ও শিশুরোগ বিষেশজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবার-দাবার খাওয়াই বেশি উত্তম।
লেখকের মন্তব্য
পাকা পেঁপেঁ ফল হিসেবে আমাদের খুবই পছন্দের একটা ফল এবং দামেও অনেক সস্তা। গ্রামাঞ্চলে তো প্রায় বাড়িতেই তাদের বাড়ির আঙ্গিনায়, ভিটে জমিতে পেঁপেঁর আবাদ করতে দেখা যায়। কাঁচা পেঁপেঁ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের তরকারী রান্না করা যায় এবং এটাও অনেক সহজলোভ্য আবার দামেও সস্তা। বাজারে নিত্যপণের দাম যে হারে বাড়তে শুরু করেছে সেই হিসেবে পেঁপেঁর দাম নাগালের মধ্যেই পাওয়া যায়, যা গরীবদের জন্য অনেক ভালো। তাই নিয়মিত পেঁপেঁ খাওয়ার অভ্যাস করুন এবং নিজে ও পরিবারের সবাই সুস্থ্য থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url