ডাল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।

ডাল খাওয়ার উপকারিতা এবং ডাল খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি, আবার এ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। ডাল আমাদের জন্য অত্যন্ত ভাড়ী এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার হিসেবে পরিচিত। একেক ডালের একেক রকম গুনাগুন এবং কার্যকারিতা রয়েছে। মশুর ডালের কার্যকারিতা, মুগ ডালের কার্যকারিতা, কলাইয়ের ডালের কার্যকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
ডাল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এছাড়া রয়েছে ছোলার ডালের উপকারিতা কেমন, মটর ডালের কার্যকারিতা, অড়হর ডালের গুনাগুন কেমন, খেঁসারির ডালের উপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে যদি না জেনে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি পড়ে জানতে পারবেন। সেজন্যে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লেখাগুলো পড়ার অনুরোধ রইলো।

ভূমিকা

ডাল আমাদের সবার কাছেই অতি পরিচিত এবং পছন্দের খাবার। হোটেলে, বাড়িতে কিংবা মেসে ডাল নিত্যদিনের খাবার তালিকার মধ্যে বিদ্যমান থাকে। যেকোন ভালো মন্দ তরকারির সাথে ডাল থাকলে খাবার পরিবেশনটা সুন্দর করে তুলতে সাহায্য করে। বিশেষ করে শুকনো তরকারির সাথে ডাল মিশিয়ে ঝোল করে খেতে অনেকেই পছন্দ করে। 

গরীব বা সাধারণ মানুষের জন্য ডাল খাওয়া বেশি উপকারী। কেননা ডাল একদিকে যেমন পুষ্টিকর খাবার, সেই সাথে দামও অন্যান্য তরকারি থেকে সস্তা। আমরা যারা নিয়মিত ডাল খেয়ে থাকি কিন্ত ডাল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে খুব একটা জানিনা, আবার যারা ডাল খেতে পছন্দ করিনা তাদের জন্য ডাল কতটা উপকারী সে বিষয়ে আজকে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

মসুর ডালের উপকারিতা গুলো কি কি

মসুর ডালের উপকারিতা ও কার্যকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। মসুর ডালকে গরীবের আমিষ বলা হয়ে থাকে। কেননা গরীব মানুষেরা তো ভালো কোন কিছু কেনার স্বামর্থ্য রাখেনা। তাদের জন্য মসুর ডাল দামেও নাগালের মধ্যে এবং অনেক পুষ্টিগুন সম্পন্ন। ছোট ও বড় দুই রকমের মসুর এদেশে হতে দেখা যায়; বৈশিষ্ট হলো- 

এর কোনটাই ওজনের দিক দিয়ে এবং আকারে বড় ছোট হয়না। চৈত্র মাসে মসূর ক্ষেত থেকে খামারে নিয়ে এসে ঝাড়াই করা হয়ে থাকে। এটি চাষ করা হয় ভারতের প্রায় সর্বত্রই, তবে বিশেষ করে মাদ্রাজে, বিহারে, উত্তর ও মধ্যপ্রদেশে। তাছাড়া বাংলার প্রায় সব অঞ্চলেই অল্প বিস্তর চাষ করতে দেখা যায়। সব অঞ্চলেই এর কচি গাছগুলি শাক হিসেবে রান্না করে খেতে দেখা যায়। মসুর ডালের গুনাগুন সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

মূত্রনালী পরিষ্কার করতেঃ অনেক সময় পেটে বায়ু হয়েছে বা পেট ফাপা ফাপা ভাব দেখা দেয়। উপরে অথবা নিচে কোনদিকেই নিঃসরন হচ্ছেনা, এক্ষেত্রেও মূত্রকৃচ্ছ্রতা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে খোসা সহ মসূরের ডাল এক লিটার পানিতে সিদ্ধ করে ৫০০ মিলিমিটার থাকতে নামিয়ে রেখে দিতে হবে। ওটা থিতিয়ে গেলে উপর থেকে পাতলা পানি আস্তে আস্তে ঢেলে নিতে হবে এবং এক ঘন্টা পর পর ৩/৪ বার করে খাওয়াতে হবে। তাহলেই মূত্রনালী স্বাভাবিকতা আনতে সাহায্য করবে এবং ঐ সমস্যা চলে যাবে।

দাহ রোগ সাড়াতে মসূর ডালঃ যাদের শরীরে মেদ কম, যাকে বলে হাড়ে-মাসে জড়ানো, এদের দেখা যায় প্রকৃতির আবহাওয়া পরিবর্তন হলে তাদের দাহ ক্ষণে শীত উপস্থিত হয়। তেল না মাখলে থাকতে পারেনা। এক্ষেত্রে এক লিটার পানির সাথে ২৫ গ্রাম মসূর সিদ্ধ করে ছেঁকে নিয়ে কিছুদিন খাবারের সময় অথবা অন্য সময় খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। এভাবে ক্ষেতে পারলে শরীরে মাংস বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে।

মাথা ধরা বা মাথা ব্যাথায় মসূর ডালঃ সারাদিন পরিশ্রম করার ফলে বিকালের দিকে প্রায়ই মাথা ধরে থাকে। এমন সমস্যা যাদের দেখা দিবে তাদের ক্ষেত্রে গোটা মসূর ডাল সিদ্ধ করে ছেঁকে নিয়ে সেই পানিটা খেতে হবে। তাহলেই বিকালের দিকে যে মাথা ধরা বা মাথা ব্যাথার যন্ত্রনা ভালো হয়ে যাবে।

পেটের ব্যাথা দূর করতে মসূর ডালঃ আমরা অনেক সময় মুখের রুচিতে মাত্রারিরক্ত খেয়েই থাকি, শাকপাতা কোন কিছুতেই অরুচি নেই, কিন্ত এর পরিণতিতে দেখা যায় যে, পেতের ভিতরে কি যেন গজ্‌গজ্‌ শুরু করছে, আর ভিতরে ফুটছে, তার সাথে অনেক ব্যাথাও হচ্ছে। এর সমাধানে গোটা মসূরের ডাল পানির সাথে সিদ্ধ করে উপরের ঐ স্বচ্ছ পানি আধা ঘন্টা পর পর ২/৩ বার করে খেতে পারলে পেটের ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করবে।

জীর্ণজ্বরে মসূর ডালঃ এক প্রকার জ্বর দেখা যায় যেটাকে আমরা ঘুস্‌ঘুসে জ্বর বলে থাকি। এই ধরনের জ্বর সারাতে ২০/২৫ গ্রাম আস্ত মসূরের ডাল ৫ কাপ পানির সাথে সিদ্ধ করে ৩ কাপ পরিমাণে থাকতে নামিয়ে নিয়ে ছেঁকে ঐ পানিটা ২ থেকে ৩ বার করে খেতে হবে। তাহলে ঠিক হয়ে যাবে।

চোখ উঠা দূর করতে মসূর ডালঃ চোখ উঠা রোগ অনেক সময় অনেকের দেখা যায়। এর উপসর্গ হলো চোখ ফুলে যাওয়া ও পিচুটি পড়া। এক্ষেত্রে মসূরের ডাল বেটে চোখের পাতার পাশে লাগিয়ে দিতে পারলে ফুলো এবং পিচুটি পড়া দূর করতে সাহায্য করবে।

ফোঁড়া ভালো করতে মসূর ডালঃ কিছু কিছু ফোড়া এমন দেখা যায় যে, পেকে গিয়েছে কিন্ত ফাটছে না, আবার এমনও দেখা যায় যে, পাকছেও না , যাকে বলে দরকচা মেরে আছে। এক্ষেত্রে সঠিক সমাধান হলো- মসূরের ডাল বেটে হালকা গরম করে ফোড়ার উপর প্রলেপ করে দিতে পারলে এটা বসে যেতে এবং ফেটে যেতে সাহায্য করবে।

মুগ ডালের উপকারিতা গুলো কি কি

মুগ ডাল আমাদের কাছে অতি পরিচিত একটি খাবার হিসেবে পরিচিত। মুগ ডালের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এই মুগ ডাল সম্বন্ধে ভারতের গুজরাটে একটা প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে, যার বাংলা অনুবাদ এমনঃ মুগ বলে, আমার দানা সবুজ মাথায় কালো দাগ,
আমাকে খেলেই রোগ সেরে যায় লাগ ভেলকি লাগ।

আয়ুর্বেদের মতে ভাজা মুগ ডালঃ অয়ুর্বেদের মতে ভাজা মুগে কাঁচা মুগের সব গুনই রয়েছে। তবে ভাজা মুগের ডাল সারক অর্থাৎ মল ও বায়ু নিঃসারন করতে সাহায্য করে। মুগ কালো, সবুজ, হলুদ, সাদা ও লাল রঙের হতে দেখা যায়। কিন্ত চরক ও সুশ্রুতের মতে, সবুজ মুগই সর্বশ্রেষ্ঠ। শরীর সুস্থ্য রাখতে মুগ ডালের কার্যকারিতা গুলো নিচে আলোচনা করা হলোঃ
  • মুগ রুক্ষ, হালকা মল রোধ করে, কফ ও পিত্তের দোষ হরণ করে, চোখের জন্য ভালো, জ্বর সারিয়ে দেয়।
  • ভাজা মুগ ডাল ঘন করে রান্না করে তাতে মুড়ি, মধু ও চিনি মিশিয়ে খেতে পারলে শরীরের জ্বালা দূর হয়, জ্বরে এবং পেটের অসুখ দূর করতেও সাহায্য করে।
  • মুগ ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে অসুস্থ্য রোগীকে খাওয়ালে এটা অতি উত্তম খাবার।
  • মুগের ঘন ডালের থেকেও মুগের পাতলা জুস বেশি উপকারী। এটা একেবারেই বায়ু সৃষ্টি করেনা।
  • পুরানো জ্বরে কিংবা অন্যান্য পেটের অসুখে মুগের জুস খেতে পারলে এটা দুধের মতো উপকার করে।
  • শরীরে কফ, পিত্ত ও বাত সদ্য জ্বর হয়েছে যাতে দুধ খাওয়া নিষেধ সেই জ্বরে রোগীর জন্য মুগের জুস খাওয়ানো যেতে পারে। অসুস্থ্য ব্যক্তিদের এই জুস খুবই উপকারী।
  • মুগের আটা বা বেসন দিয়ে মুগ পাক নামক মিষ্টি হয় যা ছোলার ডালের বেসনের মিষ্টির চেয়ে অনেক বেশি উপকারী।
  • মুগের বেসনের পুষ্টিকর লাড্ডূ খাওয়া শরীরের জন্য খুবই কার্যকর। বিশেষ করে শীতকালে।

কলাইয়ের ডালের উপকারিতা গুলো কি কি

কলাই সাধারনত শীতল, গুরুপাক, শুক্র, পিত্ত, বায়ু ও মলবর্ধক এবং অধিক পুষ্টিকর। ভাজা কলাই--উষ্ণবীর্য, স্নিগ্ধ, রুচিবল ও শুক্রাণু বর্ধক, বায়ুনাশক। কলাইয়ের ডাল অনেক পুষ্টিকর। যারা মাঠে কাজ করে, শারীরিক পরিশ্রম করে তাদের জন্য কলাইয়ের ডাল খুবই উপকারী। কলাইয়ের ডালের কার্যকারীতা বা সুস্থ্য থাকতে কলাইয়ের ডালের উপকারিতা নিচে আলোচনা করা হলোঃ
  1. কলাইকে ভারী, পাকে মধুর, স্নিগ্ধ, রুচিকারক, বায়ুনাশক, বীর্যবর্ধক বলা হয়ে থাকে।
  2. কলাই পেটে জমে থাকা মল পাতলা করে নিচে নামিয়ে বের করতে সাহায্য করে।
  3. এটি অত্যন্ত পুষ্টিগুন সম্পন্ন এবং মলমূত্র মুক্ত করতে সাহায্য করে।
  4. স্তন্যপায়ী মায়েদের স্তনে দুগ্ধ বৃদ্ধি করতে এবং মেদ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে।
  5. কলাই অর্শ এবং শ্বাসরোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
  6. কলাইয়ের ডালের বড়ি ও কলাইয়ের ডালের বড়া বলপ্রদ, পুষ্টিকর, বীর্যবর্ধক, বায়ুরোগনাশক এবং রুচি উৎপাদক হিসেবে কাজ করে থাকে।
  7. কলাইয়ের ডালের পাঁপড় রুচি বৃদ্ধি করে, খিদে বাড়াতে সাহায্য করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, রুক্ষ এবং ভাড়ী খাদ্য হিসেবে কাজ করে।
  8. কলাইয়ের ডাল যেন বায়ুকারক না হয় সেজন্য এর সাথে যথেষ্ঠ পরিমাণে রসুন ও হিং ফোড়ন মেশাতে হবে।
  9. কলাইয়ের ডালে গ্যাসের সমস্যা না হয় সেজন্য এর সাথে আদা, গোলমরিচ আর হিং মেশাতে হবে।
  10. কলাইয়ের ডাল প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতের জন্য খুবই উপকারী। এই ডাল পুষ্টিকর এবং শীতল।
  11. কলাইয়ের ডালের রুটি রাজশাহীতে অনেক জনপ্রিয় একটা খাবার হিসেবে তোলপাড় সৃষ্টি করে ফেলেছে।
  12. ভাজা কলাইয়ের ডালের সাথে ফুলকপি, মুলো দিয়ে শীতকালে খিচুড়ি রান্না করেও খেতে দেখা যায়।
  13. এগুলো ছাড়াও কালাইয়ের ডালের লাড্ডূ, কলাইয়ের ডালের বড়া, কলাইয়ের ডালের সাথে দই মেশানো বড়া, কলাইয়ের ডালের পানীয়, শ্বেতীরোগীদের জন্য কলাইয়ের রুটি ইত্যাদি বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে সাহায্য করে।

ছোলার ডালের উপকারিতা গুলো কি কি

ছোলা সাধারণত বাজারে দুই ধরনের দেখতে পাওয়া যায়--একটা কালো রঙের দেশি ছোলা ও সাদা রঙের বড় বড় কাবুলি ছোলা। প্রতিদিন সকালে ভিজে রাখা ছোলার পানি বা ভেজা ছোলা আদা ও লবন দিয়ে খেতে পারলে বিকার, পিত্তের জন্য যে জ্বর হয়ে থাকে তা ভালো করতে সাহায্য করে। আয়ুর্বেদের মতেঃ ছোলা লঘু, উষ্ণবীর্য বল ও বায়ুবর্ধক হিসেবে কাজ করে থাকে। 

শ্বাস, কাশি, কফ ও রক্তপিত্ত উপশম করতে সাহায্য করে। কাঁচা সবুজ ছোলা ভাজা গুরুপাক ও শরীরের বল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ছোলার ডাল পিষিয়ে বেসন তৈরী করা হয়। পানিতে ভিজিয়ে রাখা ছোলায় থাকে ভিটামিন 'বি' এবং কচি ছোলার শাকে থাকে ভিটামিন 'বি' ও 'সি'। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ছোলার ডালের উপকারিতা ও কার্যকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলোঃ
  1. শুকনো ছোলা ভাজা খাওয়ার পর এক গ্লাস পানি খেলে নির্বলতা অর্থাৎ পুরুষদের ধাতুক্ষীনতা দূর করতে সাহায্য করে।
  2. রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ছোলা ভাজা খাওয়ার পর এক গ্লাস দুধ খেলে শ্বাসনালিকায় জমে থাকা কফ একত্র হয়ে সকালে বের হয়ে যেতে সাহায্য করে।
  3. কাশি দূর করতে রাতে শুতে যাওয়ার আগে ছোলা ভাজা আর এক গ্লাস পানি খেতে হবে।
  4. গলা বসে যাওয়া ঠিক করতে রাতে ছোলা ভাজা আর এক গ্লাস গরম পানি পান করলে গলা বসে যাওয়া ভালো করে গলা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
  5. গলার স্বর সুন্দর করতে ছোলার সাথে গুড় মিশিয়ে খেতে হবে।
  6. গরম গরম ছোলা ভাজা খাওয়ার ফলে অর্শ থেকে রক্তস্রাব বন্ধ হয়।
  7. সর্দি দূর করতে নিয়মিত কয়দিন গরম ছোলা শুঁকতে হবে।
  8. ছোলার বেসন পানিতে গুলিয়ে শরীরে মালিশ করে গোসল করতে পারলে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে,ত্বক পরিষ্কার করতে এবং চুলকানি সারাতে সাহায্য করে।
  9. ছোলার বেসন পানিতে গুলিয়ে মাথা ধুয়ে ফেললে মাথার চুলকানি এবং ফুস্কুরি দূর করতে সাহায্য করে।
  10. মুখে বেসনের মালিশ করলে মুখের কালো দাগ দূর করে দিয়ে ত্বক নরম ও কোমল করতে সাহায্য করে।
  11. বেসন পানিতে গুলিয়ে মধু মিশিয়ে লাগালে পুরুষদের অন্ডকোষের স্ফীতি বা ফুলে ওঠা কমে যায়।

মটর ডাল খাওয়ার উপকারিতা গুলো

মটর ডাল খাওয়ার কার্যকারিতা অপরিসীম। আস্ত মটরের ঘুগনি বাঙালী রসনায় খুবই প্রিয়। অতিথিদের মন ভরাতে মটর ডালের ঘুগনি অতি পরিচিত। মটর সিদ্ধ করে তেঁতুলের চাটনি ও দই সহযোগে বানানো হয় চটপটা বা চাট। মটর ডালের ধোঁকা খেতে অনেকেই পছন্দ করে থাকে। মটর ডাল ভাতে, মটর ডালের বড়া, মুলো দিয়ে মটর ডাল, ভাতের সাথে ঘন মটরের ডাল সবাই অনেক তৃপ্তি সহকারে খেতে পছন্দ করে। 

টক রান্না করতে মটর ডালের বড়ি প্রয়োজন হয়। আয়ুর্বেদের মতেঃ মটর ডাল লঘু, শরীর শীতল করতে, মলরোধক ও রুচি আনতা সাহায্য করে। রক্তদোষ পিত্তের বিকার ও কফ দূর করতে সাহায্য করে। শরীর সুস্থ্য ও ভালো রাখতে মটর ডালের কার্যকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলোঃ
  • মটর ডালের ভেজানো পানি খেলে বমি থামাতে বা বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
  • মটর ডাল তেঁতুল, লবণ ও দুধের সাথে বেটে নিয়ে প্রলেপ আকারে দিতে পারলে ফোঁড়া তাড়াতাড়ি ফেটে যেতে সাহায্য করে।
  • মটর ডালে প্রচুর পরিমাণে খনিজ, সুপাচ্য প্রোটিন বেশি মাত্রায় রয়েছে।
  • মটর ডালে কার্বোহাইড্রেট ও ভিটামিন 'এ' এবং ভিটামিন 'সি' পর্যাপ্ত পরিমানে রয়েছে।
  • মটর ডালে প্রচুর পুষ্টিগুন রয়েছে। তাই স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।

অড়হর ডালের উপকারিতা গুলো জেনে নিন

ডালের বিভিন্ন জাতের মধ্যে একটি অন্যতম জাত হলো অড়হর ডাল। আয়ুর্বেদের মতে; অড়হর ডাল কষা দূর করতে, শরীর শীতল করতে, মল রোধ করতে, মুখের ক্লান্তি উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। হাকিমি মতেঃ অড়হর পাতার সাথে নিম পাতা খেলে অর্শ রোগের উপশম হয়। অড়হর ডাল কফ, রক্তের দোষ ও বিষক্রিয়া নষ্ট করতে সাহায্য করে। অড়হর ডালের উপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলোঃ
  1. অড়হর ডাল খেলে শ্রবণশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, পিপাসা মেটাতে সাহায্য করে।
  2. অড়হরের পাতা পুড়িয়ে মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারলে বীর্য স্থলন কমে যায়।
  3. অড়হর ডাল দই বা দুধ দিয়ে রান্না করলে রুক্ষতা নষ্ট করতে সাহায্য করে।
  4. অড়হর ডাল হালকা পানি দিয়ে পিষিয়ে একশিরা রোগে প্রলেপ করে লাগালে রোগ কমে যায়।
  5. অড়হর শিকড় ঘষে নিয়ে ছানির ওপর দিলে উপকার পাওয়া যাবে।
  6. এর পাতা সিদ্ধ করে কুলকুচি করলে দাঁতের ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করে।
  7. জন্ডিস রোগীদের ক্ষেত্রে অড়হর পাতা খাওয়া খুবই উপকারী।
  8. অড়হর ডালে ঘি মিশিয়ে খেতে পারলে বায়ুকারক আর থাকেনা।
  9. অড়হর পাতা পুড়িয়ে সেই ছাই এর সাথে টক দই মিশিয়ে লাগালে চুলকানি সেরে যায়।
  10. অড়হর পাতা ও দুর্বাঘাসের রস একসাথে মিশিয়ে লাগালে আধকপালে মাথা ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করে।
  11. অড়হর ডাল পিষিয়ে নিয়ে পানি মিশিয়ে খেতে পারলে সিদ্ধির নেশা ছুটে যায়।

খেঁসারির ডাল খাওয়ার উপকারিতা

খেঁসারির ডাল খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। শীতকালে গ্রামাঞ্চলে মুলো দিয়ে খেঁসারির ডাল খাওয়ার ব্যপক প্রচলন রয়েছে। এছাড়া খেঁসারির শাক ফুলকি দিয়ে খেতে অনেক মজাদার। যা অনেকেই খুব পছন্দ করে থাকে। আবার অনেকেই খেঁসারির ফল সিদ্ধ করে খেয়ে থাকেন। 

খেঁসারির ডাল রুক্ষ কমাতে সাহায্য করে থাকে। বায়ুবর্ধক, অম্ল ও শূল উৎপাদক, মল রোধে সাহায্য করে থাকে। এছাড়া কফ দূর করতে, পিত্ত, অরুচি ও বমন নাশ করতে সাহায্য করে থাকে। কাশি, গলগন্ড রোগ ও বেশি মোটা হয়ে যাওয়ার প্রভাব রোধ করতে সাহয্য করে।

ডাল খাওয়ার ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা কি কি

ডাল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। কিন্ত ডাল খাওয়ার যে কিছু ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা রয়েছে তা আমরা অনেকেই জানিনা। ডাল খাওয়ার ক্ষতিকর দিকের মধ্যে অন্যতম হলো যাদের শরীর আগে থেকেই মোটা বা অতিরিক্ত মেদ তাদের জন্য ডাল না খাওয়াই উত্তম। কেননা নিয়মিত ডাল খেলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 

এছাড়া যাদের গ্যাসের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্যও ডাল না খাওয়াই উচিৎ। ডালের মধ্যে খেঁসারির ডাল বেশি পরিমাণে খেলে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা দেখা দেয়, এমনকি দৃষ্টিশক্তি হারানোর ভয় থাকে। এই ডাল খেতে ভালো লাগলেও চোখের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় বেশি না খাওয়াই উত্তম। এছাড়া ছোলার ডাল খাওয়ার ফলে কুষ্ঠের প্রকোপ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পাথরি রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি করে থাকে। 

যারা এমন সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য ছোলা না খাওয়াই উত্তম। এমনকি বেশি ছোলা খাওয়ার ফলে পেটে বায়ুর প্রকোপও বৃদ্ধি পেতে পারে। সেজন্য খাবারে যাতে ছোলার পরিমাণ বেশি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

শেষ কথা ও লেখকের মন্তব্য

আমরা নিশ্চয় উপোরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে ডাল খাওয়ার উপকারিতা এবং ডাল খাওয়ার ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারলাম। ডাল খাওয়া আমাদের জন্য নিত্যদিনের খাদ্য তালিকায় খুবই নিয়মিত হয়ে গেছে। গরীব মানুষের জন্য ডাল খাওয়াই বেশি উত্তম এবং এটা দামেও তাদের নাগালের মধ্যেই। যেকোন খাবার জিনিসের অপকারিতার থেকে উপকারিতাই বেশি। 

তবে খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত যেন না হয়ে যায়। কেননা অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো দিক হতে পারেনা। শারীরিক পরিশ্রম যারা করে থাকে তাদের জন্য ডাল খাওয়া বেশি জরুরী। নিয়মিত ডাল খাওয়ার অভ্যাস করলে শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং কাজ করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করবে। তাই নিয়মিত পরিমান মতো ডাল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী, তবে খেয়াল রাখা দরকার যেন অতিরিক্ত না হয়ে যায়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url