কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

কলা খাওয়ার উপকারিতা এবং কলা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। শারীরিক সুস্থ্যতা বজায় রাখার জন্য কলা খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। কলা প্রায় সারাবছরই পাওয়া যায় এবং ফলনও অধিক। তাই অন্যান্য ফলের তুলনায় দামও কম, যা সব মানুষের সাধ্যের মধ্যে কুলোয়। শুধুমাত্র কলা খেয়েও পেট ভরানো যায়।
কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এছাড়াও সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে, রাতে কলা খেলে কি উপকার সাধন হবে, সাগর কলা খাওয়ার কার্যকারিতা কেমন রয়েছে, মহিলাদের গর্ভাবস্তায় কাঁচা কলা খাওয়ার যে উপকার রয়েছে সেই সব বিষয় নিয়ে আজকের আলোচনা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে পারলে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

ভূমিকা

কলা অত্যন্ত সুপরিচিত এবং সুস্বাদু ফল হিসেবে আমাদের সবার কাছেই অত্যন্ত প্রিয় এবং সব শ্রেণীর মানুষের জন্য সাধ্যের মধ্যেই পাওয়া যায়। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের কলা পাওয়া যায়, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে কলার আবাদ বেশি দেখা যায়। বিভিন্ন ধরনের কলার মধ্যে, কাঁঠালি কলা, মর্তমান বা বিচা কলা, সাগর কলা, চাঁপা কলা, বিচি কলা, সবরি কলা ইত্যাদি। 

কলা যে জাতেরই হোক না কেন, এর মধ্যে পুষ্টিগুণ প্রায় সব কলারই সমান। সাগর কলা দেখতে বড় কিন্ত দামে সস্তা। তাই হিসেব অনুযায়ী পুষ্টিগুন এবং খরচের হিসাব করলে সাগর কলা খাওয়াই বেশি উত্তম। একদিকে খরচ কম কিন্ত পুষ্টিগুন অধিক। অবশ্য বিচি কলা বা মর্তমানের মতো দেশীয় কলাগুলির স্বাদ অনেক বেশি। তাই বলা যায় যে, যে কলা দেখতে যেমন বড় তার স্বাদ এবং পুষ্টিগুনও অনেক ভালো।

সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা কি কি

কলা অত্যন্ত পুষ্টিগুন সম্পন্ন একটি ফল যা আমাদের সবার সাথে অতি পরিচিত একটি নাম। সারা বছরেই কম বেশি কলা পাওয়া যায়, তাই দামের দিক থেকেও খুব স্বাভাবিক। কর্মজীবি বা খেটে খাওয়া মানুষের জন্য কলা খাওয়া খুব জরুরী। কেননা, দামের দিক দিয়ে স্বাশ্রয়ী এবং অধিক পুষ্টি পেতে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে কলাগাছের শিকড়ের রস এক চামচ করে কয়েকদিন খেতে পারলে পেটের কেঁচো কৃমি বেড়িয়ে যাবে। 

প্রতিদিন নিয়মিত সকালে কলা খাওয়ার অভ্যাস থাকলে আপনার শরীরে বল বৃদ্ধি করতে এবং শরীরে শক্তি যোগাতে অধিক কার্যকরী ভুমিকা পালন করে থাকে। সকালে খালি পেটে কলা খেয়ে পানি খেলে শরীরে এনার্জি আনতে সাহায্য করবে। যার ফলে আপনি অধিক পরিশ্রম করতে পারবেন, অধিক পরিশ্রম করলেও শরীরে ক্লান্তি ভাব বা দূর্বলতা আসবেনা। 

গ্রামাঞ্চলে অনেক শ্রমিককে দেখা যায় তারা কাজে নামার আগে বা কাজ শুরু করার আগে কলা খেয়ে নেয়। যার ফলে সকালের নাস্তাও হয়ে গেলো, অন্যদিকে শারীরিক শক্তিও পেতে সাহায্য করলো। কলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, আয়োডিন, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ সরবরাহ করতে সাহায্য করে। তাই যারা কায়িক পরিশ্রম করে থাকেন কিংবা শরীর নিয়ে বেশি সচেতন তাদেরকে নিয়মিত সকালে কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। 

দেখবেন আপনার শরীর যেমন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করবে এবং কাজের ক্ষেত্রে কোন ক্লান্তি ভাব আসবেনা। সকালে কলা খেলে রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অধিক সাহায্য করে। তাই নিয়মিত কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং সুস্থ্য থাকুন।

দুধ-কলা একসাথে খাওয়ার উপকারিতা

দুধ এবং কলা আমাদের সাথে অতি পরিচিত দুটি পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ খাবার। দুধের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিণ এবং কলার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিনের উপস্থিতি। দুধ এবং কলা একসাথে খেলে সবচেয়ে বেশি কার্যকারিতা হবে শরীরের ওজন বাড়াতে বা শরীরে ফ্যাট বাড়াতে সাহায্য করবে। যাদের চেহারা হালকা ধরনের, ভালো ভালো খাদ্য খেলেও ওজন বাড়া নিয়ে চিন্তিত,

তাদের জন্য নিয়মিত দুধ এবং কলা একসাথে খেলে চেহারায় ব্যবক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে। দুধ এবং কলা ভাতের সাথ মিশিয়ে খেতে পারলে খাবারে রুচিবোধ বাড়াতে সাহায্য করবে যা শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে দিবে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে দেখা যায় রমজানে সেহরীর সময় তরকারী দিয়ে খাওয়ার পর দুধ এবং কলা দিয়ে ভাত খাওয়ার রীতি প্রচলন রয়েছে। 

এটা একদিকে যেমন ভালো মন্দ তরকারীর অভাব পূরণ করে থাকে অন্যদিকে শরীরের ওজন বাড়ানোর জন্য অধিক উপযোগী। শহরের তুলনায় গ্রামে সব কিছুরই দাম সীমিত এবং সহজে পাওয়া যায়। দামের দিক দিয়ে দুধ এবং কলা সব ধরনের মানুষের জন্য নাগালের মধ্যে থাকায় এই দুটি খাদ্য প্রায় সব পরিবারেই দেখা যায়। 

তবে সারা বছর খেতে না পারলেও বিশেষ করে রমজানে বেশি খেতে দেখা যায়। 
যদিও এই দুইটা খাবার একসাথে খাওয়ার জন্য নিষেধ করে থাকেন, তাদের জন্য সমস্যা যাদের আগে থেকেই শরীরে ওজন বেশি এবং ফ্যাট। তবে সত্যিকারের অর্থে দুধ এবং কলা খাওয়ার কার্যকরী ভূমিকা অপরিহার্য। 

তাই বলবো অতিরিক্ত চিন্তা বা ক্ষতিকর দিক চিন্তা না করে আপনার শরীরের শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং শরীরের স্বাভাবিক ভারসাম্য বজায় রাখতে নিয়মিত দুধ এবং কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সারাদিনের পরিশ্রম শেষে বা অনেক খাটুনির পর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুধ এবং কলা খেলে আপনার শরীরে এনার্জি ফিরে পেতে সাহায্য করবে।

পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা

সারা বছর পাওয়া যায় এমন ফলের মধ্যে অন্যতম ফল হচ্ছে কলা। ছোট বড় সবার জন্যই অনেক পছন্দের এবং অত্যন্ত পুষ্টিগুন সম্পন্ন ফল হিসেবে অতি পরিচিত। ছোট বাচ্চাদের পাকা কলা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি এবং মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, ওজন বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে। 

পাকা কলা সকালের নাস্তা হিসেবে রুটি দিয়ে খেতে পারবেন, দুপুরে ক্লান্তি দূর করতেও খেতে পারবেন, বিকালের নাস্তা হিসেবেও কলা খেতে পারবেন, এমনকি সারাদিনের পরিশ্রমের ফলে শরীরে যে ঘাটতি দেখা দিবে বা শরীর যে ক্লান্ত থাকবে তা দূর করার জন্য রাতে ঘুমানোর আগেও পাকা কলা খেয়ে ঘুমাতে পারবেন। যা শরীরের স্বাভাবিক ভারসাম্য বজায় আনতে বা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। এছাড়াও পাকা কলা বিভিন্ন রোগ ব্যাধি দূর করতে এবং বিভিন্ন কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

যেমনঃ
  • ডায়াবেটিস রোগীদের অস্বাভাবিক ক্ষুধা নিবারন করতে বা খিদের উপসর্গ মেটাতে পাকা কলা খেয়ে মেটানো যেতে পারে।
  • যক্ষ্মা রোগীদের টানা কয়েকদিন জ্বর থাকলে পাকা কলা খাওয়ানো যেতে পারে।
  • পাকা কলা মোমবাতির আগুনে হালকা গরম করে নিয়ে সামান্য গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে পারলে হাঁপানীর রোগীদের ব্যপক উপকার মিলবে।
  • মহিলাদের বিভিন্ন রোগের উপসমে বা পেটের পুরানো ব্যাথার অনুভব হলে পাকা কলা খেতে পারলে অনেক উপকার হবে।
  • পাকা বিচা কলা বা মর্তমান কলা চটকে অল্প পানির সাথে মিশিয়ে ছেঁকে নিয়ে সেই পানি সকালে এবং বিকালে দুই চামচ করে খেতে পারলে শুকনো কাশি ভালো হয়ে যাবে।
  • পাকা কলা মুখের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে, তেষ্টা মেটাতে সাহায্য করে, কৃমি ও পিত্ত নাশ দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
  • পাকা কলার মধ্যে প্রায় ২৭ শতাংশ শর্করা থাকে যা শরীরে তাপ জোগাতে সাহায্য করে থাকে।

গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্তায় সবকিছুই নিয়ম মাফিক চলতে হবে, খাদ্যগ্রহণ সঠিক সময়ে এবং পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হবে, ভারী কোন কাজকর্ম করা যাবেনা, মোট কথা মহিলাদের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় এই গর্ভাবস্তার সময়। ফলমূল, শাকসবজি নিয়মিত খেতে হবে। কলা তার মধ্যে অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার, পাকা কলা এবং কাঁচা কলা এই দুইটাই খুবই উপকারী। 

গর্ভাবস্তায় কাঁচা কলা খেলে যে উপকার সাধন হবে তার বিস্তারিত আলোচনা নিচে জানতে পারবেন।
  • গর্ভাবস্তায় কাঁচা কলা খেলে রক্তের চাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
  • গর্ভের বাচ্চার স্নায়ু বাড়াতে এবং বাচ্চার মস্তিষ্ক গঠন করতে সাহায্য করে।
  • ফাইবার বাড়ানোর উপসর্গ হিসেবে কাজ করে এবং ভিটামিন সি বাড়াতে সাহায্য করে, যা বাচ্চার দেহ গঠন করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
  • বাচ্চার দেহের ওজন সঠিক মাত্রায় রাখতে সাহায্য করে।
  • পেট খারাপ হলে বা পাতলা পায়খানা হলে এবং পেট ফাপা বা বদ হজম দূর করতে ব্যপক সাহায্য করে থাকে।
  • খাবারে রুচি বাড়াতে সাহায্য করে এবং পুষ্টির যোগান দিতে সাহায্য করে।
  • হাত-পায়ের মাংসপেশি শক্ত করতে সাহায্য করে।
  • খিট্মিটে মেজাজ দূর করতে সাহায্য করে, যার ফলে বাচ্চার মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  • গর্ভের বাচ্চার পুষ্টিগুণ বাড়াতে সাহায্য করে, যার দ্বারা শিশুর বিকাশ ত্বরান্বিত করতে ব্যপক ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • কাঁচা কলার যে বিশেষ উপাদান রয়েছে যার মাধ্যমে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
  • তাই গর্ভাবস্তায় পাকা কলার পাশাপাশি কাঁচা কলা খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে, এতে করে বাচ্চা এবং বাচ্চার মা উভয়ের জন্যই অনেক উপকারী।

রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা

রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম। কেননা, সারাদিন পরিশ্রম করার পর বা অনেক খাটা খাটুনির পর রাতে আরাম করা জরুরী। সারাদিন যারা মাঠে কাজ করে তাদের তো অনেক পরিশ্রম করতে হয়, শরীর অনেক ক্লান্ত থাকে। শরীরের ক্লান্তি এবং দূর্বলতা দূর করার জন্য রাতে ঘুমানোর আগে কলা খেতে পারলে আপনার শরীরের ক্লান্তি এবং দূর্বলতা দূর করে দিতে সাহায্য করবে। 

এছাড়াও রাতে খুব ভালো ঘুম হতে সাহায্য করবে। সারাদিন পরিশ্রম করার পরেও যাদের রাতের ঘুম ঠিকমতো না হলে শরীরে দূর্বলতা অনুভব হয় এবং শারীরিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। অনেকে স্বাস্থ্য সচেতনার জন্য বা শারীরিক শক্তি বজায় রাখার জন্য কলার সাথে দুধ মিশিয়ে খেয়ে থাকেন। দুধ এবং কলা দিয়ে ভাত খেতে পারলে আপনার শরীরে এনার্জি আনতে সাহায্য করবে। 

যেকোন পুষ্টিকর খাদ্য রাতে খাওয়ার অভ্যাস করলে ঐ খাবারের সম্পূর্ণ পুষ্টি পেতে সাহায্য করে। কারণ হলো, রাতে খাওয়ার পর আর তো পরিশ্রম করতে হয়না, যার ফলে খাবারের পুষ্টি সারা শরীরে সঠিকভাবে এবং সঠিক মাত্রায় পৌঁছাতে সাহায্য করে থাকে। কলা খেতে ছোট বড় সবাই পছন্দ করে থাকে, তাই আপনি যদি পরিবারের কর্তা হোন বা প্রধান হয়ে থাকেন তাহলে আপনার দায়িত্ব পরিবারের সকলের স্বাস্থ্য যেন ভালো থাকে তার দেকভাল করা। 

রাতে কলা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে শরীরের স্বাভাবিক ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রেহাই পেতেও সাহায্য করবে। কেননা, কলা খাওয়ার পুষ্টি উপাদানের মধ্যে অন্যতম কাজ হলো শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করা। তাই কলা খাওয়ার নিয়মটা চালু করে দিন, দেখবেন আপনার পরিবার বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রেহাই পাবে। নিজে এবং পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুস্থ্য এবং সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারবেন।

সাগর কলা খাওয়ার উপকারিতা

কলা খাওয়ার যে বিভিন্ন উপকার রয়েছে তা আমাদের প্রায় সবারই জানা। কাঁচা কলা কিংবা পাকা কলা যে কলাই খাওয়া হোক না কেন সব রকম কলা খাওয়াই ছোট বড় সকলের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার। আবার কলার মধ্যে বিভিন্ন জাতের কলা রয়েছে, একেকটা কলার একেক রকম কার্যকারিতা রয়েছে বা আলাদা আলাদা স্বাদ রয়েছে। 

আমাদের আশেপাশে যেসব কলা পাওয়া যায় তার মধ্যে সাগর কলার উপকার বা কার্যকারী ক্ষমতা অন্যান্য কলার থেকে অনেক ভালো। সাগর কলার বিভিন্ন উপকারিতা বা কার্যকারিতা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হইলোঃ

ওজন বৃদ্ধি করতে সাগর কলার উপকারিতাঃ
আমাদের শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে এবং শরীরের ওজন ধরে রাখতে সাগর কলার উপকারিতা অপরিহার্য। প্রতিদিন নিয়মিত ২/৩ টা করে পাকা কলার সাথে এক গ্লাস দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারলে আমাদের শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাগর কলার উপকারিতাঃ
আমরা প্রতিনিয়ত যে খাবারগুলো খেয়ে থাকি অনেক সময় দেখা যায় খাবার হজম হতে দেরি হয় কিংবা হজম হতে চায়না। সেক্ষেত্রে আপনি যদি খাবার খাওয়ার ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর একটা অথবা দুইটা করে সাগর কলা খেতে পারেন তাহলে দ্রূত আপনার খাবার হজম করতে সাহায্য করবে বা খুব তারাতারি হজম হয়ে যাবে।

যৌন শক্তি বা উত্তেজনা বাড়াতে সাগর কলার উপকারিতাঃ
আমরা যারা সাগর কলা খেয়ে থাকি তারা হয়তো অনেকেই জানেনা যে, সাগর কলা শুক্রাণুর পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে, যার ফলে যৌন উত্তেজনা বাড়াতে এবং যৌণ শক্তি বাড়ানোর উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকে।

রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়াতে সাগর কলার উপকারিতাঃ
নিয়মিত সাগর কলা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে আপনার শরীরে রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করবে, কেননা সাগর কলার মধ্যে ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। তাইতো গর্ভবতী মহিলাদের নিয়মিত সাগর কলা খাওয়ানো হয়। যাতে করে প্রসবের সময় রক্তের পরিমাণ বেশি থাকে এবং বাচ্চার স্বাস্থ্যও ভালো রাখতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাগর কলার উপকারিতাঃ
আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়, কারও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি আবার কারও কম। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা দূর্বল তাদের জন্য সঠিক পরামর্শ হলো নিয়মিত সাগর কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

হার্ট ভালো রাখতে সাগর কলার উপকারিতাঃ
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জটিল এবং মারাত্বক সমস্যা হচ্ছে হার্টের সমস্যা। এই হার্টের সমস্যা প্রায় লোকেরই দেখা যায়। তাদের জন্য দরকার নিয়মিত সাগর কলা খাওয়ার অভ্যাস করা, কারণ নিয়মিত কলা খেতে পারলে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে রাখতে সাহায্য করে। ফলে হার্টের ঝুঁকি কম থাকে এবং হার্টের সমস্যা থকালেও সাগর কলা খেতে থাকলে এই সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করবে। এছাড়াও কিডনির সমস্যার সমাধানেও সাগর কলা খাওয়া অত্যন্ত জরুরী।

কলা খাওয়ার ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা

কলা খাওয়ার উপকারিতা বা কার্যকারিতা সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত আছি। পাকা কলা কিংবা কাঁচা কলা সব রকম কলা খাওয়াই উপকার। তবে একটা বিষয় জেনে রাখা ভালো, ফলমূল, শাক-সবজি কিংবা অন্যান্য সব ধরনের খাবার-দাবারের মধ্যে উপকারিতাই বেশি পাওয়া যায়। ক্ষতির পরিমাণ কিংবা অপকারিতা খুবই কম। 

তবে কলা নতুন কোন সমস্যা সৃষ্টি করেনা, যাদের নিতান্তই সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য কলা খাওয়া ক্ষতিকর। বিশেষ করে যাদের শরীর আগে থেকে ফ্যাট এবং অধিক ওজনের তাদের জন্য কলা না খাওয়াই উত্তম। কেননা কলা খেলে তার শরীরের ওজন আরও বৃদ্ধি করবে, যা তার জন্য স্বাভাবিক জীবন যাপন করা কষ্টসাধ্যা ব্যাপার হয়ে যাবে। 

এছাড়াও শীতের সময় বা ঠান্ডার সময়ে গর্ভাবস্তায় কলা না খাওয়াই উত্তম। কারণ, ঠান্ডার সময়ে কলা খেলে বাচ্চার ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা থাকে, এমনকি ছোট বাচ্চাদের নিউমোনিয়া হওয়ার আশংকা দেখা যায়। আবার যাদের গ্যাস্টিকের সমস্যা আছে, তাদের জন্য একসাথে দুধ কলা না খাওয়াই ভালো। এতে তার গ্যাসের সমস্যা আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সঠিক সময়ে এবং সঠিক নিয়মে কলা খাওয়াই সবচেয়ে বেশি ভালো।

লেখকের মন্তব্য

উপোরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চয় জানতে পেরেছেন কলা খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে। ফলমূলের মধ্যে কলাটাই প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায় এবং দামেও সস্তা। অসুখ বিসখে কিংবা ভালো খাবার বা ফলমূল কেনার আমাদের অনেকেরই স্বামর্থ থাকেনা। তাদের জন্য উত্তম ব্যবস্থা হলো নিয়মিত কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। 

এতে আপনার শরীর স্বাস্থ্য যেমন ভালো থাকবে, অপরদিকে বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে নিরাপদে থাকতে পারবেন। কারণ, কলা শরীরের স্বাভাবিক ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই সঠিক পরামর্শ হলো, আপনি যদি স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে থাকেন তাহলে আপনার এবং আপনার পরিবারের সদস্যদের ভালো রাখতে নিয়মিত কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url