রমজানের আমল ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
রমজানের গুরুত্বপূর্ণ আমল এবং রমজানের ফজিলত সম্পর্কে আজকের আলোচনা। আমরা জানি, রমজান মাস অতি বরকতময় মাস, গুনাহ্ মাফের মাস, মাগফিরাতের মাস, নাজাতের মাস। নবী করীম (সাঃ) রমজান মাসের বিশেষ এহতেমাম করিয়াছেন, যার কারণে তিনি রমজানের পূর্বে শাবান মাসের শেষ তারিখে রমজানের গুরুত্বের উপর বিশেষভাবে নসীহত করিয়াছেন, রমজানের একটি মুহূর্তও যেন নষ্ট না হয় বা অবহেলায় না কেটে যায়।
এছাড়াও রমজান মাসে কোন কাজ গুলো বেশি বেশি করতে হবে, ইফতারির ফজিলত কি, আল্লাহ্ তায়ালাকে সন্তষ্টি করার আমল কোনগুলো, শবে কদরের ফজিলত ইত্যাদি বিষয় নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পোষ্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আরও অনেক বিষয়ে জানতে পারবেন।
রমজান মাসে আমলের ফজিলত
রমজান মাসের আমলের সাথে অন্যান্য মাসের আমলের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। রমজানের বাইরে আমল করে আমরা যে সওয়াব পাই, সেই আমলগুলি রমজান মাসে করলে কত বেশি সওয়াব হাসিল করা যাবে সেই বিষয়ে আলোচনা করা হইলো। হযরত সালমান (রাযিঃ) বলেন, নবী করিম (সাঃ) সাবান মাসের শেষ দিকে আমাদেরকে নসিহত করিয়াছেন যে,
তোমাদের উপর এমন একটি মাস আসিতেছে, যাহা অত্যন্ত মর্যাদাশীল এবং বরকতময়। আল্লাহ তাআলা এই রমজান মাসে রোজা রাখাকে ফরজ করেছেন এবং এই মাসের রাত্রগুলিতে নামাজ পড়াকে অর্থাৎ তারাবিহ পড়াকে সওয়াবের কাজ বানাইয়াছেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য এই মাসে কোন নফল ইবাদত করিবে আল্লাহ পাক ঐ বান্দাকে একটি ফরজ আদায় করার সওয়াব দান করিবেন।
আর যে ব্যক্তি রমজান মাসে কোন ফরজ আদায় করিবে আল্লাহ পাক তাকে সত্তরটি ফরজ আদায় করার সওয়াব দান করবেন। রমজান মাস সবরের মাস, আর সবরের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা জান্নাত রাখিয়াছেন। রমজান মাস মানুষের সাথে সহানুভূতির মাস। রমজান মাসে মুমিনের রিজিক বাড়িয়ে দেয়া হয়। রমজান মাস এমন একটি ফজিলত পূর্ণ মাস যে,
ইহার প্রথম অংশে আল্লাহর রহমত নাযিল হয়, দ্বিতীয় বা মাঝের অংশে মাগফেরাত করা হয় বা গুনাহ মাফ করা হয় এবং তৃতীয় বা শেষের অংশে নাজাত দেয়া হয় বা জাহান্নাম হইতে মুক্তি দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি এ রমজান মাসে আপন গোলাম কিংবা কর্মচারী ও খাদেমের কাজের বোঝা হালকা করিয়া দিবে আল্লাহ তা'আলা তাকে মাফ করে দিবেন এবং জাহান্নামের আগুন হইতে মুক্তি দান করিবেন।
এছাড়া রমজানুল মোবারক মাসে গুরুত্ব সহকারে ফরজ ইবাদত গুলির এহতেমাম করিতে হইবে এবং বেশি বেশি নফল ইবাদত করিতে হইবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যে, অনেকেই সেহরি খাওয়ার পর ঘুমিয়ে পড়ে, যার ফলে ফজরের ফরজ নামাজ কাজা হয়ে যায়। সেহরি খাওয়ার পর ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণে আমরা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ফরজকে কাজা করিয়া দিলাম অথবা অসম্পূর্ণ করে রেখে দিলাম।
জামাতে সালাত আদায় করার বিষয়ে, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীসে এরশাদ ফরমাইয়াছেন, যাহারা মসজিদের নিকটে থাকে তাহাদের নামাজ মসজিদ ছাড়া যেন আদায় হয় না। ঠিক একইভাবে অনেকের ইফতারের কারণে মাগরিবের নামাজ জামাতে আদায় করা কঠিন হয়ে পড়ে, এক্ষেত্রে প্রথম রাকাত বা তাকবীরে উলার মতো গুরুত্বপূর্ণ আমল ছুটে যায়।
তাই আমাদের আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে, এই বরকতময় মাসে ফরজ নামাজ গুলি তাকবীর ওয়ালা জামাতের সাথে আদায় করার চেষ্টা করব এবং নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত বেশি বেশি করব, এমনকি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
রমজান মাসে কোন কাজগুলি বেশি বেশি করতে হয়
রমজান মাস আমলের মাস, ফজিলতের মাস, সওয়াব কামাইয়ের মাস, গুনাহ মাফের মাস, অত্যন্ত দামী মাস হিসেবে আমাদের কাছে দেওয়া হয়েছে। যাতে করে আমরা পাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে পারি এবং বেশি বেশি নেক কাজ করতে পারি। এই একটা মাস যেন আমরা পরিপূর্ণ হক আদায় করে পালন করতে পারি, কোন সময়ই যেন অবহেলা বা নষ্ট না করি তার জন্য সদা সর্বদা অবগত থাকতে হবে।
রমজান মাসকে তিনটা ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কারণ মানুষ আমরা তিন ধরনের রয়েছি। এক, ঐ সমস্ত লোক যাদের কোন গুনাহের বোঝা নেই; এই সব লোকের জন্য রমজানের শুরু থেকেই রহমত এবং নেয়ামত ও পুরস্কারের বৃষ্টি বর্ষন হতে থাকে। দ্বিতীয়,ঐ সব লোক যাদের কিছু মামুলী গুনাহ আছে; তাদের জন্য রমজানের কিছু অংশ রোজা রাখার পর এই রোযার বরকতে ও বদলায় মাগফেরাত হয়ে যায়।
তৃতীয়, সেই সব লোক যারা অনেক বেশি গুনাহগার; তাদের জন্য রমজানের বেশিরভাগ রোযা রাখিবার কারণে জাহান্নাম হতে মুক্তি পেয়ে যাবে। তাই আমরা যেন, রমজানের বাইরেও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারি তার জন্য আল্লাহর ভয় আমাদের অন্তরে পয়দা করতে হবে। যেন রমজানের পরিপূর্ণ সওয়াব আমরা হাসিল করতে পারি।
রমজান মাসে অন্যান্য আমলের ন্যায় যে চারটি কাজ বেশি বেশি করতে আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন। চারটি কাজের মধ্যে দুইটি কাজ করতে হবে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য, আর দুইটি কাজ করতে হবে এমন যাহা না করিয়া আমাদের কোন উপায় নাই। প্রথমে যে দুই কাজ যা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে, উহা এই যে অধিক পরিমাণে কালিমা তাইয়্যেবা পড়িতে হবে এবং বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়িতে হবে।
আর দুইটি কাজ যা না করিয়া কোন উপায় নাই তা হলো- আল্লাহ তায়ালার নিকট জান্নাত পাওয়ার জন্য বেশি বেশি দোয়া করতে হবে এবং জাহান্নাম হইতে মুক্তির জন্য দোয়া করিতে হইবে। কালিমা পাঠের ফজিলত- যে ব্যক্তি এখলাসের সহিত এই কালিমা পাঠ করিবে সাথে সাথে তার জন্য আসমানের দরজাসমূহ খুলিয়া যায় এবং এই কালিমা আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এমনকি এই কালিমা তাইয়্যেবা হইলো সর্বশ্রেষ্ঠ যিকির।
আর ইস্তিগফারের ফজিলত হইলো- যে ব্যক্তি বেশি পরিমাণে এই ইস্তিগফার করিবে, আল্লাহ তায়ালা তার অভাব ও সংকটের জন্য রাস্তা খুলিয়া দিবেন, তার দুঃখ ও দুশ্চিন্তা দূর করিয়া দিবেন এবং তার জন্য এমন রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা করিয়া দিবেন যা সে কল্পনাও করিতে পারে নাই। এই আমলটি আমাদের রমজানের বাইরেও আদায় করার চেষ্টা করতে হবে। এটা অত্যন্ত দামী এবং ফজিলতপূর্ণ আমল।
রমজানে শবে কদরের ফজিলত
রমজান মাস অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ এবং বরকতময় মাস। রমজান মাসের দামি এবং ফজিলত এর মধ্যে অন্যতম একটি আমল হচ্ছে শবে কদরের আমল। রমজান মাসের রাত্রি গুলির মধ্যে একটি অন্যতম মহিমান্বিত রাতকে শবে কদর বলা হয়ে থাকে। শবে কদর খুবই বরকতময় এবং কল্যাণময় রাত্র। কালামে পাকের মধ্যে শবে কদরের রাতকে হাজার মাস হইতেও উত্তম বলা হয়েছে।
যার হিসাব করলে হাজার মাসে তিরাশি বছর চার মাস হয়। কতই না ভাগ্যবান সেইসব লোক যাদের এই রাত্রে ইবাদত করার তৌফিক হয়েছে। কেননা, যে ব্যক্তি এই মহিমান্বিত রাতে ইবাদত করল বা ইবাদতের মধ্যে কাটাইয়া দিলো সেই ব্যক্তি যেন তিরাশি বছর চার মাসের বেশি ইবাদতের মধ্যে কাটাইয়া দিলো। আর আমাদের এটাও জানা নাই যে, হাজার মাসের চাইতেও কত বেশি উত্তম।
যারা শবে কদরের এই মহিমান্বিত রাতের মর্যাদা বুঝিয়াছে তাদের জন্য সত্যি কারের একটি আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানী। 'দূররে মানসূর' কিতাবে হযরত আনাস (রাঃ) হইতে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি এরশাদ নকল করা হইয়াছে যে, আল্লাহ তায়ালা শবে কদর আমার উম্মতকেই দান করিয়াছেন; যা পূর্ববর্তী উম্মতগণ উহা পায় নাই।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমাইয়াছেন, যে ব্যক্তি শবে কদরে ঈমানের সহিত এবং সওয়াবের নিয়তে ইবাদতের জন্য দাঁড়াবে আল্লাহ তায়ালা তার পেছনের সমস্ত গুনাহ মাফ করিয়া দিবেন। অন্য এক হাদীসে হযরত আনাস (রাযিঃ) বলেন, একবার রমজান মাস আসিলে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমাইলেন,
তোমাদের নিকট এমন একটি মাস আসিয়াছে, উহাতে একটি রাত্র আছে যাহা হাজার মাস হইতেও উত্তম। যে ব্যক্তি এই রাত্র থেকে মাহরুম থাকিয়া গেল সে যেন সমস্ত ভালাই এবং কল্যাণ হইতে মাহরুম থাকিয়া গেল। আর এই রাত্রের কল্যাণ হইতে কেবল ওই ব্যক্তিই মাহরুম থাকে যে প্রকৃতপক্ষেই মাহরুম। (তারগীবঃ ইবনে মাজাহ)
অন্য এক হাদীসে হযরত আয়েশা (রাযিঃ) হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হইতে বর্ণনা করেন যে, তোমরা রমজান মোবারকের শেষ দশদিনের বিজোড় রাত্রিগুলিতে শবে কদর তালাশ করো। (মিশকাতঃ বুখারী) এই হিসাবে উল্লিখিত হাদিস মোতাবেক শবে কদর ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ তারিখের রাত্রগুলিতে তালাশ করা উচিত।
এই রাত্রের অন্যান্য আলামতের মধ্যে একটি হইলো-এই রাত্রটি নির্মল ঝলমলে হইবে, নিঝুম, নিথর-না অধিক গরম না অধিক ঠান্ডা; বরং মধ্যম ধরনের হইবে। (নূরের আধিক্যের কারণে) চন্দ্রোজ্জ্বল রাত্রের ন্যায় মনে হইবে। এই রাত্রে সকাল পর্যন্ত শয়তানের প্রতি তারকা নিক্ষেপ করা হয়না। আরও একটি আলামত হইলো এই যে,
পরদিন সকালে সূর্য কিরণবিহীন একেবারে গোলাকার পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় উদিত হবে। হুজুর পাক (সাঃ) শবে কদরের রাতে এই দোয়া করিতে এরশাদ ফরমাইয়াছেন, আয়াতের অর্থ- হে আল্লাহ্! আপনি বড় ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করিয়া দিন। (মিশকাতঃ তিরমিযী,ইবনে মাজাহ, আহমদ)।
রমজানে ইফতারের ফজিলত
রমজান মাসে ইফতারি করা একটা অন্যতম সওয়াবের কাজ। রমজান মাস অত্যন্ত বরকতময় মাস,ফজিলতের মাস, ধৈর্যের মাস, গুনাহ মাফের মাস। রমজান মাসে রোযার আদবের মধ্যে বা রোযা কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো হালাল রুজি দ্বারা ইফতার করা। সওয়াবের আশায় আমরা রোজা রাখি, বিভিন্ন আমল করে থাকি।
কিন্ত আমাদের খাদ্যের মধ্যে ভেজাল থাকলে বা হারাম টাকায় খাদ্য গ্রহন করলে আপনার আমার আমলগুলি বরবাদ হয়ে যেতে পারে। সেইদিকে আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন আমরা হালাল রুজি গ্রহন করতে পারি এবং হালাল খাদ্য দিয়ে ইফতার করতে পারি। ইফতারির ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস বর্ণিত আছে।
তার মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ হলো-যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাইবে, এটা তার জন্য গুনাহ্ মাফের উসিলা হবে এবং জাহান্নাম হইতে মুক্তির কারণ হইবে। কিন্ত এর দ্বারা সেই রোযাদারের সমান সওয়াবের ভাগী হইবে। তবে সেই রোযাদার ব্যক্তির সওয়াবের কোন কমতি করা হইবেনা। এটা শোনার পর সাহাবায়ে কেরাম আরজ করিলেন,
ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমাদের মধ্যে প্রত্যেকেই তো এমন সামর্থ্য রাখেনা যে, কোন রোজাদারকে ইফতার করাইতে পারে। হুজুর (সাঃ) এরশাদ ফরমাইলেন, (পেট ভর্তি করিয়া খাওয়াইতে হবে এমন না) এই সওয়াব তো আল্লাহ তায়ালা একটু খেজুর খাওয়াইলে অথবা এক ঢোক পানি পান করাইলে কিংবা এক চুমুক দুধ পান করাইলেও দান করিবেন।
এছাড়া হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য আরেক হাদিসে বর্ণনা করিয়াছেন যে, যে ব্যক্তি হালাল কামাই দ্বারা বা হালাল রুজি দ্বারা রমজান মাসে কাহাকেও ইফতার করাইবে, সে ব্যক্তির উপর রমজানের রাত্রসমূহে ফেরেশতারা রহমত পাঠাইতে থাকেন এবং শবে কদরের রাতে হযরত জিবরাঈল আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে মোসাফাহা করেন,
তার দিলে নম্রতা পয়দা হয় এবং তাহার চক্ষু হইতে অশ্রু ঝরতে থাকে। তাছাড়া, যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে পানি পান করাইবে, আল্লাহ্ তায়ালা কিয়ামতের দিন তাকে হাউজে কাউসার হইতে এরুপ পানি পান করাইবেন, যার পর জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত তার আর পিপাসা লাগবেনা। গুরুত্বপূর্ণ ফজিলতের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ইফতারী সামনে রেখে যে দোয়া করা হয় আল্লাহ পাক তা কবুল করেন।
রমজানে কুরআনের ফজিলত
রমজান মাসে প্রত্যেকটা আমলের ফজিলত অপরিসীম। কেননা এই মাসে শয়তানকে আবদ্ধ করে রাখা হয়। রমজানের বাইরে এগারোটি মাস শয়তানের ধোকায় পড়ে মানুষ অনেক খারাপ কাজ কিংবা গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকে। তাই আল্লাহ পাক বান্দার গুনাহ্ মাফের সুযোগ দেয়ার জন্য এবং বেশি বেশি আমল করার সুযোগ দান করে দেন।
এই সুযোগেও যারা গুনাহ থেকে বাঁচতে পারেনা এবং বেশি বেশি নেকীর কাজ বা সওয়াবের কাজ করতে পারেনা তাদের মতো হতভাগা আর কেউ নাই। আল্লাহ পাকের এই পবিত্র কালামে পাক কুরআনুল কারীমের সাথে এই মুবারক মাসের বড় বেশি খাছ সম্পর্ক রয়েছে। আল্লাহ তায়ালার সব কয়টি কিতাব সাধারণতঃ এই রমজান মাসেই নাযিল করা হয়েছে।
যেমন পবিত্র কুরআন লাওহে মাহফূজ হইতে দুনিয়ার আসমানে সম্পূর্ণ ভাবে এই মাসেই নাযিল করা হয়েছে। সেখান থেকে প্রয়োজন মতো অল্প অল্প করে তেইশ বছরে দুনিয়াতে নাযিল করা হয়েছে। ইহাতে বুঝা যায় যে, আল্লাহর কালামের সহিত এই রমজান মাসের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। যার কারণেই এই মাসে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াতের কথা বর্ণিত হয়েছে।
হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সাল্লাম প্রতি বছর রমজান মাসে সম্পূর্ণভাবে কুরআনুল কারীম আমাদের প্রিয় নবী করীম (সাঃ) কে শুনাইতেন। কোন কোন রেওয়াতে আসিয়াছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হইতে শুনিতেন। মোটকথা যত বেশি সম্ভব এই রমজানের মোবারক মাসে যত বেশি সম্ভব বেশি বেশি করে কোরআন তেলাওয়াত করা উত্তম ইবাদত।
যারা চাকুরী করে তারা ইচ্ছা করলেই সকালে ফজরের পর কিংবা রাতে কুরআন তেলাওয়াত করতে পারেন। আর যারা কৃষি কাজ করেন তারা তো কারো অধীনে থাকেন না। তারা ইচ্ছা করলে ক্ষেত-খামারে বসিয়াও কুরআন তেলাওয়া করিতে পারেন।
রমজানে তারাবী ও এতেকাফের ফজিলত
রমজানে আরও গুরুত্বপূর্ণ আমলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তারাবী পড়া এবং শেষের দশ দিনে মসজিদে ইত্তিকাফ করার ফজিলত অপরিহার্য। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমাইয়াছেন যে, আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসের রোজা তোমাদের জন্য ফরজ করিয়াছেন এবং উহার রাত্রি জাগরণ অর্থাৎ তারাবির নামাজ পড়াকে সুন্নাত করিয়াছেন।
ইহা দ্বারা বুঝা যায় যে, স্বয়ং আল্লাহতালার পক্ষ হতে তারাবির নামাজের হুকুম রয়েছে। সুতরাং যে সমস্ত বর্ণনায় নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবিকে নিজের দিকে সম্বন্ধ করে বলিয়াছেন যে, তারাবিকে আমি সুন্নত করিয়াছি, ইহার অর্থ হইল গুরুত্ব দেওয়া। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও তারাবী পড়াকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতেন।
এছাড়াও রমজান মাসে সওয়াবের আশায় ইত্তিকাফ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। এতেকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করাকে এতেকাফ বলে। হানাফীগনের মতে ইত্তেকাফ তিন প্রকার। প্রথম- ওয়াজিব এত্তেকাফ, যা কোন কাজের উপর মান্নত করে করা হয়। দ্বিতীয়- সুন্নত এত্তেকাফ, যা রমজান মাসের শেষ দশ দিনে মসজিদে বসে করা হয়।
হযরত নবী কারীম (সাঃ) রমজান মাসের শেষ দশ দিনে এই এত্তেকাফ করিতেন। তাই রমজান মাসে এত্তেকাফ করা আমার নবীর সুন্নাত। তৃতীয়- যা নফল ইত্তেকাফ, এটার জন্য কোন সময় বা দিনকাল নির্দিষ্ট নাই। আমাদের প্রত্যেকের উচিত হইলো, যখনই মসজিদে প্রবেশ করিব তখন ইত্তেকাফের নিয়ত করে প্রবেশ করতে হবে। তাহলে নফল ইত্তেকাফ আদায় হয়ে যাবে,ইনশাআল্লাহ। এতেকাফের সওয়াব অনেক বেশি, কেননা স্বয়ং নবী করীম (সাঃ) সর্বদা ইহার এহ্তেমাম করিতেন।
লেখকের মন্তব্য
রমজান মাস আমাদের জন্য অত্যন্ত বরকতময়, ফজিলতপূর্ণ মাস, সবরের মাস, গুনাহ্ মাফের মাস, সওয়াব কামাইয়ের মাস। এই মাস মুমিনের জন্য বোনাস স্বরুপ। হতভাগা তো সেই ব্যক্তি যে রমজান মাস পাইলো অথচ নিজের গুনাহ মাফ করাইতে পারিলোনা। যারা এই মাসে আমল করা থেকে বিরত থাকবে, মাহরুম থাকিবে তারা প্রকৃতপক্ষেই মাহরুম।
রমজান মাসে ফরজ নামজগুলি জামাতের সাথে আদায় করার চেষ্টা করতে হবে, বেশি বেশি নফল ইবাদত করতে হবে, সর্বদা আল্লাহর জিকির করিতে হবে, ইস্তেগফার করিতে হইবে সবসময়, বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করিতে হইবে, শবে কদর তালাশ করে আমল করতে হবে, শেষ দশ দিনে ইত্তেকাফের আমল করিতে হবে। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে পরিপূর্ণ হক আদায় করে আমল করার তৌফিক দান করেন, আমিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url