সকাল-সন্ধার ফজীলতপূর্ণ আমল গুলো জেনে রাখুন।

সকাল ও সন্ধার ফজীলতপূর্ণ অনেক আমল রয়েছে। ফজরের নামাজের মাধ্যমে দিনের শুরু হয় এবং মাগরীবের নামাজ দ্বারা দিনের শেষ বোঝায়। সকাল ও সন্ধার ন্যায় দিনের যেকোন সময়েই আমল করার সুযোগ রয়েছে। তবে কখন কোন আমল করলে কি ফজিলত পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে জানা থাকলে আমলে তৃপ্তি এবং আনন্দ পাওয়া যায়।
সকাল-সন্ধার ফজীলতপূর্ণ আমল
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সকাল-সন্ধায় যে আমল এবং দোয়া করতেন সেগুলো আমাদের জেনে বুঝে আমল করতে হবে। সকাল ও সন্ধ্যার আমলের মধ্যে যে ফজীলত এবং মর্যাদা রয়েছে সে সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হয়েছে।

সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফজীলত

সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফজীলত সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি এবং নিয়মিত আমল করে থাকি। যারা জানেন না তারা জেনে আমল করা শুরু করুন। কেননা, দুনিয়া আমাদের অল্প দিনের জন্য কিন্ত আখিরাত অনন্তকালের জন্য। এই অল্প দিনের দুনিয়ায় থেকে ফরয নামাজের পাশাপাশি নফল আমল করার মাধ্যমে আমরা আমাদের আখিরাতকে সুন্দর করে সাজাইতে পারি। 


ফজরের ফরয নামাজের পর অন্যতম একটা আমল হচ্ছে হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করা। যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধায় তিনবার 'আউজু বিল্লাহিছ্‌, ছামিউল আলিম মিনাশ্‌ শায়তনির রজীম' পড়ে সুরা হাশরের শেষের তিন আয়াত পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা নিযুক্ত করে দিবেন, তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত ঐই ব্যক্তির জন্য রহমতের দোয়া করবেন। 

সেদিন সে মারা গেলে শহীদের মৃত্যু হাসিল হবে। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এভাবে পাঠ করবে, তার জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা সকাল পর্যন্ত রহমতের দোয়া করবে এবং সে ব্যক্তি যদি মারা যায় তাহলে শহীদের মৃত্যু হাসিল হবে।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সকাল-সন্ধার দোয়া

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) সারা বিশ্বের মানুষের জন্য রহমত, সঠিক পথ প্রদর্শনকারী, উম্মতের নাজাতের কান্ডারী, আমাদের আদর্শ। তিনি যা করেছেন, যেভাবে চলাফেরা করেছেন, আমাদের যা করেত বলেছেন সেগুলো আমাদের জন্য আদর্শ। তিনি নিজেও সকাল-সন্ধা অনেক আমল করেছেন যা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। 


তিরমিযি শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সকাল বেলায় এই দোয়াটি পাঠ করতেন,
বাংলা উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা বিকা আছবাহনা ওয়া বিকা আমছায়না ওয়া বিকা নাহইয়া ওয়া বিকা নামুওতু ওয়া ইলাইকান্‌নুশুর।

তিরমিযি শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সন্ধ্যা বেলায় এই দোয়াটি পাঠ করতেন,
বাংলা উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা বিকা আমছায়না ওয়া বিকা আছবাহ্‌না ওয়া বিকা নাহ্‌ইয়া ওয়া বিকা নামুওতু ওয়া ইলাইকাল মাছির।

সকাল-সন্ধ্যার ফজীলতপূর্ণ, গুরুত্ত্বপূর্ণ আমল

প্রত্যেক ফরয সালাতের পর কিছু গুরুত্ত্বপূর্ণ আমল রয়েছে। ফরয সালাত আদায় করা প্রত্যেক প্রাপ্ত নারী-পুরুষের উপর ফরজ। কেউ যদি ফরজ নামাজ আদায় করতে পারে তাহলে তার জন্য মাসনুন আমল করা বা ছোট ছোট দোয়া পাঠ করা, নফল এবাদত করা অনেক সহজ হবে এবং এই আমল তাকে অনেক আনন্দ দিবে। ফজিলতপূর্ণ আমলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফজর এবং মাগড়ীব বা সকাল-সন্ধ্যার আমলগুলি গুরুত্ত্বপূর্ণ।


হযরত হাসান (রঃ) বর্ণনা করেন, হযরত সামুরা ইবনে জুন্দুব (রাঃ) আমাকে বলছেন, আমি কি তোমাকে
এমন একটি হাদীস শুনাবো না যা আমি রাসূল (সাঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ) এবং হযরত ওমর (রাঃ) এর নিকট কয়েকবার শুনেছি? আমি বললাম অবশ্যই বলুন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা নিচের এই দোয়া পাঠ করে আল্লাহ তায়ালার নিকট সে যা চাইবে আল্লাহ অবশ্যই তা দান করবেন। 

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) বলেন, হযরত মূসা (আঃ) প্রতিদিন ৮ বার এই দোয়া পড়ে আল্লাহ পাকের নিকট যা চাইতেন আল্লাহ পাক তাই দান করতেন। (তিবরানী, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ)

বাংলা উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা আন্‌তা খালাকতানী ওয়া আন্‌তা তাহদিইনি ওয়া আন্‌তা তুত্‌ঈমনি ওয়া আন্‌তা তাছ্‌কিইনি ওয়া আন্‌তা তুমিইতুনী ওয়া আন্‌তা তুহইইনী।

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। তুমিই আমাকে হেদায়েত দান করেছো। তুমিই আমাকে খাওয়াও, তুমিই আমাকে পান করাও, তুমিই আমাকে মৃত্যু দান করবে এবং তুমিই আমাকে জীবিত করবে।

যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় নিচের দোয়াটি ৭ বার করে পড়বে আল্লাহ পাক তার বড় বড় কাজ নিজ দায়িত্বে নিয়ে নিবেন এবং অতি সহজেই তা সম্পূর্ণ করে দিবেন এবং দুনিয়া ও আখিরাতের চিন্তা-ভাবনার জন্য আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট হবেন, এমনকি সন্দেহযুক্ত অন্তরে পড়লেও। (মুসলিম; আবু দাঊদঃ ৪;৩২১)
দোয়াটি হলোঃ হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিয়ামাল ওয়াকিল, নিয়ামাল মাওলা ওয়া নিয়ামান নাছীর।

হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা (রাঃ) এর দোয়া

আল্লাহুম্মা হাসিবনী হিসাবাই ইয়াসীরা। 
অর্থঃ-আল্লাহ আমার হিসাবকে সহজ করিয়া দিন।
ফযীলতঃ কোন বান্দা যদি প্রতিদিন ফজর এবং মাগরীবের নামাজের পরে তিনবার করে এই দোয়া পাঠ করিবে আল্লাহ পাক কিয়ামতের দিন ঐ বান্দার হিসাবকে সহজ করিয়া দিবেন।

কোন বান্দা যদি নিচের এই দোয়াটি সকাল-সন্ধায় ৭ বার করে পাঠ করিবে আল্লাহ পাক তাকে দোযখের আযাব থেকে মুক্তি দান করবেন।
দোয়াটি হলোঃ আল্লাহুম্মা আজিরনী মিনান্নার।
কোন বান্দা যদি নিচের এই দোয়াটি ৮ বার পাঠ করিবে আল্লাহ পাক তাকে জান্নাত দান করবেন।
দোয়াটি হলোঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা রিদাকা ওয়াল জান্নাতা।

কবরে প্রশ্নের জবাব সহজ হওয়ার দোয়া

মৃত্যুর পর আমাদের সবার প্রথম মঞ্জিল, প্রথম ধাপ হলো কবর। বলা হয় যে, কবরের ধাপ যে পার হতে পারবে তার জন্য পরের ধাপ পার হওয়া সহজ হয়ে যাবে। আমলের বিচারে কবর কারো জন্য জান্নাতের অংশ হয়ে যাবে আবার কারো জন্য জাহান্নামের গর্ত হয়ে যাবে। 

কারো আমলের কারণে কবর দৃষ্টি পর্যন্ত প্রশস্ত হয়ে যাবে আবার কারো জন্য এতো সংকীর্ন হয়ে যাবে যে, বুকের এক পাশের হাড় আরেক পাশের হাড়ের মধ্যে ঢুকে যাবে। তাই আমাদের কবরের আযাব থেকে বাচার জন্য গুরুত্ত্ব সহকারে আমল করতে হবে এবং কবরে প্রশ্নের জবাব যেন সহজ হয় তার জন্য যেসব দোয়া ও আমল আছে তা নিয়মিত পালন করতে হবে।

দোয়াটি হলোঃ রাদিতু বিল্লাহি রাব্বান ওয়া বিল ইসলামী দ্বিনান ওয়া বি মুহাম্মাদিন নাবীয়ান ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম।
অর্থঃ আমি রাযী হয়েছি এ অবস্থার উপর যে, মহান আল্লাহ আমার পালনকর্তা এবং ইসলাম আমার ধর্ম, আর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নবী।

কবরে মুনকির নাকীরের প্রশ্নের জবাব সহজ হওয়ার জন্য প্রত্যেহ ফজর এবং মাগরীবের নামাজের পর উপরের দোয়াটি ৩ বার করে পাঠ করিতে হবে। হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধায় এই দোয়াটি পাঠ করিবে তার জন্য বেহেশত ওয়াজিব করে দেয়া হবে এবং কিয়ামতের দিন তাকে অফুরন্ত নিয়ামত দান করে খুশি করা আল্লাহ তায়ালার উপর হক হয়ে যাবে। (মুসনদে আহমাদ,৪;৩৩৭,তিরমিজী ৫;৪৬৫, মেশকাত)

যে ব্যক্তি সকাল বেলায় এই কলেমা পড়ে নেয়, আল্লাহ পাক কিয়ামতের দিন অবশ্যই তাকে সন্তষ্ট করবেন।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, সেই ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পেয়েছে, যে আল্লাহকে রব, ইসলামকে ধর্ম এবং মুহাম্মদ (সাঃ) কে রসূল হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট রয়েছে।

সাইয়্যেদুল ইস্তেগফারের ফজিলত

ইস্তেগফার হলো আল্লাহ পাকের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য শ্রেষ্ঠ দোয়া। বান্দা যত বড় গুনাহ করুক না কেন যদি অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় অবশ্যই আল্লাহ পাক সেই বান্দাকে ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ পাক ক্ষমা করতে ভালোবাসে, তাই আমাদের উচিত গুনাহ থেকে বেচে থাকার চেষ্টা করা, আর কোন কারণে যদি গুনাহ হয়ে যায় তাহলে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতে হবে। 

নিশ্চয়ই আল্লাহ বড় ক্ষমাশীল। ইস্তেগফারের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং দামী হলো সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার। যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার পাঠ করিবে এবং সেদিন যদি ঐ ব্যক্তি মারা যায় তবে সে ব্যক্তি জান্নাতি বলে বিবেচিত হবে। আর যদি কোন ব্যক্তি সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার সন্ধ্যায় বা রাতে পাঠ করিবে এবং সেই রাতে যদি ঐ ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করে তবে সেই ব্যক্তি জান্নাতি হবে, ইনশাআল্লাহ।

সাইয়্যেদুল ইস্তেগফারঃ আল্লা-হুম্মা, আংতা রাব্বি, লা-ইলা-হা ইল্লা -আংতা, খালাক্বতানী, ওয়া আনা 'আ'বদুকা, ওয়া আনা আলা- 'আহদিকা ওয়াওয়া'দিকা মাস তাতা'তু। আ'ঊযুবিকা মিং শাররি মা-ছানা'তু, আবূউ লাকা বিনি'ই মাতিকা আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিজাম্বি, ফাগ্‌ফিরলী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা-আনতা। (বোখারী ৭/১৫০ নং ৬৩০৬)

অর্থঃ "হে আল্লাহ, আপনি আমার প্রভু, আপনি ছাড়া কোনো মা'বূদ নাই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আমি আপনার কাছে প্রদত্ত অংগীকার ও প্রতিজ্ঞার উপরে রয়েছি যতটুকু পেরেছি। আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি আমি যে কর্ম করেছি, তার অকল্যাণ থেকে। আমি আপনার কাছে প্রত্যাবর্তন করছি আপনি আমাকে যত নিয়ামত দান করেছেন তা-সহ এবং আমি আপনার কাছে প্রত্যাবর্তন করছি আমার পাপ-সহ। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন, কারণ আপনি ছাড়া কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারেনা।"

শাদ্দাদ ইবনূ আউস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন; " এই দোয়াটি সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার বা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার শেষ্ঠ দু'আ। এছাড়াও ছোট ইস্তেগফার হচ্ছে, আস্তাগফিরুল্লা-হ। অর্থ-আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আস্তাগফিরুল্লা-হা ওয়া আতূবু ইলাইহি। অর্থ- আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তার দিকে তাওবা করছি।

লেখকের মন্তব্য

আমরা মুসলমান, আমাদের প্রধান নিয়ামত হলো ঈমানের বদৌলত। ঈমান আনোয়নের পর সর্বপ্রথম হুকুম হলো আল্লাহর হুকুম পালন করা। আল্লাহর হুকুম পালনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা। পাশাপাশি সুন্নাতের অনুসরণ করা, বেশি বেশি নফল ইবাদত করা।

সকাল-সন্ধ্যায় যে ফজিলতপূর্ণ আমলগুলো রয়েছে সেগুলো নিয়মিত আদায় করলে অন্তরে মানসিক প্রশান্তি লাভ হয় এবং দুনিয়া ও আখিরাত কল্যানকর হবে, ইনশাআল্লাহ। লেখাটি পড়ে যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url