তাবলীগ জামাতের ছয় নাম্বার বয়ান সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

তাবলীগ জামাতের ছয় নাম্বার বয়ান বা ছয় নম্বর উসুল সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। আমরা যারা নতুন পুরাতন তিনদিন, দশ দিন, চল্লিশ দিন বা এক চিল্লা, এমনকি ১২০ দিন বা তিন চিল্লার সাথী রয়েছি সময়ের বিবর্তনে আমরা অনেকেই তাবলীগের এই ছয় নম্বর বয়ান বা ছয় নম্বর উসুল সম্পর্কে ভুলে গেছি। তাদের জন্যই আজকে আমার এই পোস্টটি লেখা, যাতে করে আপনি ভুলে গেলেও আমার ওয়েসাইটে আসলে আপনি তাবলীগের বয়ান সম্পর্কে সম্পূর্ণ জানতে পারবেন।
তাবলীগের ছয় নাম্বার বয়ানএছাড়াও আপনি নামাজ সম্পর্কে এবং নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কেও অনেক কিছু জানতে পারবেন। আমরা যে আমলগুলি করে থাকি সে আমলের মধ্যে যদি নিয়তের গড়মিল হয় বা সহি নিয়ত না হলে কি সমস্যা হবে, এমনকি তাবলীগে যাওয়ার নিয়ম এবং ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার অনুরোধ রইলো।

ভূমিকা

বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের বাংলাদেশেও তাবলীগ জামাতের প্রচলন বিদ্যমান রয়েছে। সাধারণ জনগণের ন্যায় প্রতিবছর ছাত্র জামাতের প্রচলন বেশি লক্ষ্য করা যায়। যারা তাবলীগ জামাতে গেছেন কিংবা যারা যাবেন তাদের জন্য তাবলীগের বয়ান জেনে রাখা আবশ্যক। আবার অনেকেই তাবলীগ জামাতে যাওয়ার পরেও চর্চা বা নিয়মিত সময় না দেয়ার কারণে এই বয়ানগুলা ভুলে যায়।


পুরাতন সাথীদের পুনরায় জানার জন্য এবং নতুন সাথীদের শেখার জন্য আমি তাবলীগের ছয় নম্বর বয়ান সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করছি।
কয়েকটি গুণের উপর মেহনত করিয়া আমল করিতে পারিলে পুরো ইসলামী দ্বীনের উপর চলা অতি সহজ। 
গুণগুলো হলোঃ 
  • ১। কালিমা 
  • ২। নামাজ 
  • ৩। এলেম ও জিকির 
  • ৪। একরামুল মুসলিমিন 
  • ৫। সহিহ নিয়ত এবং
  • ৬। দাওয়াতে তাবলীগ।

কালিমা সম্পর্কে বিস্তারিত

"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ)"। কালিমার অর্থ -আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর প্রেরিত রাসূল ও বান্দা। কালিমার উদ্দেশ্য-আমরা দুই চোখে যা কিছু দেখি বা না দেখি আল্লাহ ছাড়া সব কিছুই মাখলুক। মাখলুক কিছুই করিতে পারেনা আল্লাহর হুকুম ছাড়া, আল্লাহ পাক সবকিছুই করতে পারেন মাখলুক ছাড়া তার কুদরতি হুকুমের দ্বারা। অন্য কোন তরিকায় সুখ শান্তি নাই, একমাত্র হুজুর পাক (সাঃ) এর তরিকায় সুখ, শান্তি, ইজ্জত, কামিয়াবী।


কালিমার ফজিলত-যে ব্যক্তি একীন ও ইখলাসের সহিত একবার এই কালিমা পাঠ করিবে আল্লাহ পাক তার পেছনের সমস্ত গুনাহ মাফ করিয়া দিবেন। তাই এই কালিমার লাভ ফজিলত জানিয়া নিজে আমল করতে হবে এবং কালিমার লাভ ফজিলত সম্পর্কে মানুষকে দাওয়াত দিয়ে এই কালিমার উপর আনতে হবে।

নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত

হুজুর পাক (সাঃ) যেভাবে নামাজ পড়িয়াছেন এবং তার সাহাবাদের যেভাবে নামাজ শিক্ষা দিয়েছেন সেই ভাবে নামাজ পড়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। যে ব্যক্তি গুরুত্ব সহকারে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে আল্লাহ পাক তাকে বিনা হিসাবে জান্নাত দান করবেন। যে ব্যক্তি খুশু খুজুর সহিত দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ গুরুত্ব সহকারে আদায় করিবে, আল্লাহ পাক তাকে পাঁচটি পুরস্কার দান করবেন। 


১। তার রিজিকের অভাব দূর করে দিবেন, ২। কবরের আজাব মাফ করিয়া দিবেন, ৩। আমলনামা ডান হাতে দিবেন, ৪। পুলসিরাত বিজলির ন্যায় পার করে দিবেন, ৫। এবং বিনা হিসাবে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন। আমরা ফরজ নামাজ গুলি জামাতের সাথে আদায় করবো, সুন্নত নামাজের পাবন্দি করবো, নফল এবং ওয়াজিব নামাজ পড়বো। আর এই নামাজের লাভ ফজিলত জানিয়া মানুষকে নামাজের দাওয়াত দিবো।

এলেম ও জিকির সম্পর্কে বিস্তারিত

এলেম- এলেম অর্থ জানা। আল্লাহ পাকের কখন কোন আদেশ ও কখন কোন নিষেধ জানিয়া হুজুর পাক (সাঃ) এর তরিকায় আমল করার চেষ্টা করা। যে ব্যক্তি এই এলেম শিক্ষা করার জন্য ঘর থেকে বাহির হয় গর্তের পিপীলিকা থেকে শুরু করে সমুদ্রের মৎস্য পর্যন্ত তার জন্য দোয়ায় মাগফিরাত কামনা করে। তাই নিজে এলেম শিক্ষা করব এবং এলেমের লাভ ফজিলত জানিয়া মানুষকে দাওয়াত দিবো।


জিকির- সর্ব অবস্থায় আল্লাহ পাকের ধ্যান ও খেয়াল দিলে পয়দা করা। অর্থাৎ সব সময় আল্লাহ পাকের স্মরণ করা। যে ব্যক্তি জিকির করিতে করিতে তার জিহবা তরুতাজা রাখিবে সেই ব্যক্তি হাসতে হাসতে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাই নিজে বেশি বেশি আল্লাহ পাকের জিকির করবো এবং এই জিকিরের লাভ ফজিলত জানিয়া মানুষকে দাওয়াত দিবো।

একরামুল মুসলিমীন সম্পর্কে বিস্তারিত

একরামুল মুসলিমীন হচ্ছে সমস্ত মাখলুকের কিম্মৎ বুঝিয়া কদর করা। অর্থাৎ, বড়দের সম্মান করা, ছোটদের স্নেহ করা, আলেম-ওলামাদের তাজিন করা। হুজুর পাক (সাঃ) এর মতে, যে ব্যক্তি বড়দের সম্মান করে না, ছোটদের স্নেহ করে না, আলেমদের তাজিন করেনা সে আমার উম্মত নয়। যে ব্যক্তি কোন মুসলমান ভাইয়ের একরাম করার নিয়ত করিয়া চেষ্টা করলে, 


আল্লাহ পাক তাকে মসজিদে বসে দশ বছর ইত্তেকাফ করার সওয়াব দান করিবেন। তাই আমি নিজে অপর মুসলমান ভাইয়ের একরাম করার চেষ্টা করবো এবং মুসলমান ভাইয়ের একরাম করার লাভ ফজিলত জানিয়া অপর ভাইকে দাওয়াত দিবো।

সহিহ নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত

সকল কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আমরা যা কিছু করবো একমাত্র আল্লাহ পাকের রাজি খুশির জন্যই করবো। আমাদের যাবতীয় আমল যেন একমাত্র আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্যই হয়। আল্লাহ পাকের সন্তষ্টির জন্য কেউ যদি সহিহ নিয়ত করে একটু সামান্য পরিমাণে দান করে আল্লাহ পাক তাকে পাহাড় পরিমাণ নেকী দান করবেন।

 
আর নিয়তের গড়মিল হলে পাহাড় পরিমাণে দান করলেও জাররা পরিমাণ নেকী পাওয়া যাবেনা। তাই নিজে সহিহ নিয়ত করে দান করবো এবং নিয়তের লাভ ফজিলত জেনে মানুষকে বেশি বেশি দাওয়াত দিবো।

দাওয়াত ও তাবলীগ সম্পর্কে বিস্তারিত

আল্লাহ পাকের দেয়া জান, আল্লাহ পাকের দেয়া মাল এবং আল্লাহ পাকের দেয়া সময় এই জান, মাল এবং সময় নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে জান, মাল এবং সময়ের সঠিক ব্যাবহার শিক্ষা করার যোগ্যতা অর্জন করার চেষ্টা করা। আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে কেউ যদি নিজ প্রয়োজনে এক টাকা খরচ করে আল্লাহ পাক তাকে সাত লক্ষ টাকা সদকা করার সওয়াব দান করবেন এবং 

আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে কেউ যদি একটা নেক আমল করে আল্লাহ পাক তাকে উনপঞ্চাশ কোটি নেক আমলের সওয়াব দান করবেন, ইনশাআল্লাহ। আমি নিজেও আল্লাহর রাস্তায় বেশি বেশি সময় লাগাবো এবং এই দাওয়াতে তাবলীগের লাভ ফজিলত জানিয়া মানুষকে বেশি বেশি দাওয়াত দিবো।

তরতীব- প্রত্যেকটা কাজের একটা নিয়ম বা তরতীব থাকে। দাওয়াতে তাবলীগের এই কাজটা শেখার জন্য প্রথমে তিন চিল্লা বা চার মাস সময় দিয়ে কাজটা শিখতে হবে। আর প্রতিবছর এক চিল্লা বা চল্লিশ দিন সময় লাগাতে হবে এবং প্রতিমাসে তিনদিন সময় লাগাতে হবে। এছাড়াও মসজিদের ৫ কাজের সাথে লেগে থাকতে হবে। পরিশেষে এটা বলতে হবে যে, এই কাজ করতে আমরা সবাই রাজি আছি তো, ইনশাআল্লাহ।

লেখকের মন্তব্য

তাবলীগ জামাতের বিষয় নিয়ে অনেকের মতানৈক্য থাকলেও সাধারণ ভাবে বলতে গেলে তাবলীগ জামাতের সাথে সময় লাগিয়ে অনেকেই দ্বীনের রাস্তায় উঠতে সক্ষম হয়েছে। সত্যি কথা গেলে আমি নিজেও তাবলীগে সময় দেয়ার মাধ্যমে দ্বীনের রাস্তায় উঠতে সক্ষম হয়েছি এবং দোয়ার দরখাস্ত আল্লাহ পাক যেন হেদায়াতের পথে কবুল করেন। পরিশেষে বলতে চাই, কে কি বললো সেটা না ভেবে আপনি যদি তাবলীগ জামাতে সময় দেন তাহলে এর ভালো মন্দ দিক আপনি নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন, ইনশাআল্লাহ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url